রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের আনন্দ। বৈশাখী উৎসবের অন্যতম একটি আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা।
রোববার (০২ এপ্রিল) চারুকলা অনুষদের মাঠে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঙালির প্রাণের উৎসবকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বরাবরের মতোই নিয়েছেন ব্যাপক প্রস্তুতি। অনুষদের মাঠে শিক্ষার্থীদের কেউ বাঁশ-কাঠ কেটে তৈরি করছেন হাতি-ঘোড়া-মাছ-পাখির আদল কেউবা মাটি, রং ও কাগজ দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন আকৃতির মুখোশ। এসব আকৃতি-প্রতিকৃতির মাধ্যমে তারা তুলে ধরবেন বাঙালি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি।
চারুকলা অনুষদের ১৮ ও ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পেয়ছেন এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার। প্রতিদিন তারা ১০-১২ ঘণ্টা করে কাজ করছেন বাঙালি সংস্কৃতি ও লোকজ শিল্পকর্ম বৈশাখের প্রথম দিনে মঙ্গল শোভাযাত্রায় তুলে ধরার জন্য। এবার শিক্ষার্থীরা হাতি, ঘোড়া, ময়ূর, পাখি ও বাঘসহ ১১টি বড় কাঠামোর কাজ করবেন। এছাড়া অসংখ্য মুখোশ বানানোর কাজও করছেন তারা।
চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সবুজ দাস বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যতটুকু পারছি বাঙালি এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ছাপ মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন কাঠামোতে তুলে ধরতে। বৈশাখের প্রথম দিনে প্রতি বছরই আমরা এসব বিষয় আমাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে সবার কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি।
তিনি আরও বলেন, এবার যেমন আমাদের ১১টি বড় কাঠামোর মধ্যে স্থান পেয়েছে একটি কাঠের বাঘ ও মায়ের কোলে শিশুর কাঠামো। কাঠের বাঘের কাঠামোটির মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের জাতীয় পশু সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার যে বিপদের মুখে আছে তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এছাড়া মায়ের কোলে শিশু কাঠামোটির মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে মায়ের হাতে সন্তানের মৃত্যু কিংবা সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের অযত্ন-অবহেলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে চেষ্টা করছি।
চারুকলা অনুষদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই একটি বিশেষ বিষয় বা ভাবনা হয়ে ওঠে এই শোভাযাত্রার প্রধান অনুষঙ্গ। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার স্লোগানে রবীন্দ্রনাথের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’।
মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের কৃষিজীবী মানুষদের একটি উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ। তাদের এই উৎসবটি ঘিরে যে সব সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে সেটা আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে উপস্থাপন করি। পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের লোকসংস্কৃতির উৎসব; এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে টানাটানি করলে চলবে না।
মঙ্গল শোভাযাত্রাকে শুধু বৈশাখের উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রা হিসেবে চিন্তা করা ঠিক হবে না জানিয়ে অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, এই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় দেশবাসীর মঙ্গল কামনা করে। আমরা জানি রাজধানীর জীবনে বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার তেমন সুযোগ থাকে না। আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে নগরবাসীকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করি।
অসাম্প্রদায়িকতা চর্চার পথ ধরে শোভাযাত্রাটি এখন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শোভাযাত্রাটি সর্বজনীনতাকে স্পর্শ করার জন্যই আমরা কখনও বিজ্ঞাপনের খপ্পরে পড়িনি। চারুকলার ছাত্র ও শিক্ষকদের সৃজিত শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের তহবিল গঠন করি। এতে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজের কাজ নিয়ে সাধারণ মানুষের সামনে হাজির হতে পারেন।
গত ১৯ মার্চ বাংলাদেশের খ্যাতনামা চিত্রকর ও কার্টুনিস্ট রফিকুন নবী মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কাজের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৭
এমএ/এমজেএফ/