যদিও ভারতীয়দের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুততর করতে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি অনলাইন ভিসা পদ্ধতি চালু করেছে ডেপুটি হাই কমিশন। এর ফলে (bdhc-kolkata.org) ও (visa.gov.bd) ওয়েবসাইটে অনলাইনে ভিসার আবেদনও করা যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনলাইনে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ঘর পূরণ ও ভিসার ধরন নির্ধারণে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্বাচনের বেলায় অনলাইন পদ্ধতি সময় ক্ষেপণের মোক্ষম ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না জানা ভ্রমণ প্রত্যাশীদের জন্য ডেপুটি হাই কমিশনের কাছেই প্রাইভেট কিয়স্কে অল্প খরচে ফরম পূরণের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু অনলাইনে ফরম পূরণ করে সেই রিসিট ওইদিনই ডেপুটি হাই কমিশন কাউন্টারে জমা দেওয়া কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না।
কার্যত সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে ডেপুটি হাই কমিশনের কাউন্টারে রিসিট জমা দিতে ভোর ৫টা থেকেই লাইনে দাঁড়াতে হয়। এমনকি ভিড়-ভাট্টা এড়াতে দূরের এলাকা থেকে আসা অনেককেই রাতেই লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়।
এভাবে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পর শুরু হয় ভোগান্তির নতুন পর্ব। সেই পাসপোর্ট যায় দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনে। সেখান থেকে ভিসার সিলযুক্ত পাসপোর্ট ফিরে আসতে আসতে বেরিয়ে যায় আরো ১৫ থেকে ৩০ দিন। সেভাবেই ডেলিভারির তারিখ দেওয়া হয় আবেদনকারীদের।
![কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনে ভিসা প্রত্যাশীদের ভিড়। ছবি: বাংলানিউজ](http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/HC0120170403131115.jpg)
তাই প্রত্যাশিত সময়ে ভিসা পাওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। কেরালা থেকে আসা বাইজু জোসেফ ২২ মার্চ বাংলাদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করলেও তাকে ভিসাই ডেলিভারি দেওয়া হবে ৫ এপ্রিল। একই ভাবে প্রত্যাশিত সময়ে ভিসা পেতে ব্যর্থ কেরালার আর এক ভ্রমণেচ্ছু অনুপ বিশ্বাস।
এমনকি প্রতিবন্ধী আর বয়স্কদের জন্যও বিশেষ কোনো সুবিধা রাখা হয়নি সহজে ভিসা দেওয়ার। হুইল চেয়ারে চলাচলকারী ৫৩ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী হাসান সাহানি কয়েক দফা চেষ্টা করেও বাংলাদেশি ভিসার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি। হাই কমিশনের পক্ষে বিশেষ কোনো সুবিধাও দেওয়া হয়নি তাকে।
তার অভিযোগ, বাংলাদেশ হাই কমিশনের উচিত আমাদের কিছু বিশেষ সুবিধা দেওয়া। তা না হলে আমার মতো মানুষ কি করে এতো দীর্ঘ লাইনে ভিসা নিতে পারে? ব্যাপারটা আমার কাছে প্রহসনের মতো মনে হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে আসা পর্যটকের হার সবচেয়ে বেশী বাংলা (পশ্চিম বঙ্গ) রাজ্যে। এছাড়া আশপাশের রাজ্যগুলোর ভ্রমণ প্রত্যাশীরাও কলকাতার ডেপুটি হাই কমিশন থেকে ভিসা নিয়ে থাকেন।
অবিচ্ছিন্ন ইতিহাস, ভৌগলিক নৈকট্য আর সাংস্কৃতিক ঐক্য বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষকে সবসময় কাছাকাছি সম্পর্কেই বেঁধে রেখেছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে এ দুই দেশ হয়ে উঠেছে আন্ত:নির্ভরশীল। সম্পর্কের এই ঘনিষ্ঠতা উভয় দেশের মধ্যে ভ্রমণের দাবি আরো বাড়িয়েছে। কিন্তু কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের ভিসা ইস্যুর সক্ষমতা খুবই কম।
এমন পরিস্থিতিতে তাই দাবি উঠেছে, ডেপুটি হাই কমিশনে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর। বর্তমানে কেবল সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মাত্র দু’ঘণ্টা অনলাইন রিসিটসহ পাসপোর্ট জমা নেওয়া হয়। এ সময় বাড়ালে আরো অনেক বেশী ভ্রমণ প্রত্যাশী ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সময় পেতেন। বন্ধুভাবাপন্ন দুই প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের দু’দেশে যাতায়াত সহজ করতে ভিসা পদ্ধতি আরো সহজ করা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৭
জেডএম/