এ ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৬ খুলনার একটি দল দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় সিন্ডিকেটের তিন সদস্যকে সোমবার (৩ এপ্রিল) বাগেরহাট থেকে আটক করেছে।
আটক তিনজন হলেন- মো. আহসান হাবিব খান (৪৩), মো. রুহুল আমিন খান (৪২) ও বিকাশ এজেন্ট মো. ইমরুল ইসলাম টিটু (২৬)।
সোমবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব-৬ খুলনার লবণচরাস্থ সদর দপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
র্যাব-৬’র পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল পৌনে ৯টার দিকে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় সিন্ডিকেটের এ তিন সদস্যকে আটক করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার মুলাই বেপারীকান্দি গ্রামের আজগর সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, একই গ্রামের ফয়জুল শিকদারের ছেলে মো. দিলু শিকদার এবং আলী মিয়া সরদারের ছেলে রাসেল সরদারসহ চারজন একই এলাকার ব্র্যাক কর্মকর্তা মো. শাইজিদ খানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বড় অংকের বেতনে চাকরিতে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পায়। শাইজিদ তার ভাই নূরুল আমিন খান ও বায়জিদ খান দীর্ঘ সময় ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে বলে জানানোয় তাদের কাছে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। সে মোতাবেক প্রত্যেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়ার পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি তাদের মালয়েশিয়ায় নেওয়া হয়।
যাওয়ার সময় উড়োজাহাজে এ রকম আরও ছয়জনের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। মোট ১০ জন কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পৌঁছালে শাইজিদ খানের ভাই ও অন্যান্যরা তাদের সঙ্গে দেখা করে গাড়িতে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে একটি ১২তলা ভবনে আটকে রেখে তাদের ১০ জনের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। না দিলে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তাদের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে বাংলাদেশে স্বজনদের ফোন করেও মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
একইসঙ্গে জিম্মিদেরও কথা বলিয়ে কান্নাকাটি শুনিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৪-৫ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দিতে বলা হয়।
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, এভাবে যারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৫শ’ টাকা পরিশোধ করেছেন- এমন আটজনকে জিম্মিদশা থেকে বাইরে এনে পাসপোর্ট-ভিসা রেখে সড়কে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানে তারা পুলিশের হাতে আটক হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের পর গত ১৫ মার্চ তারা দেশে ফিরতে সক্ষম হয়। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় বাকি দু’ জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও জানা জায়নি।
র্যাব-৬’র পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আট যুবক দেশে ফিরে র্যাব সদরদপ্তরে অভিযোগ করলে ঊধ্র্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা অনুসন্ধান শুরু করেন।
পরে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে র্যাব-৬’র গোয়েন্দা দল মুক্তিপণের অর্থ লেনদেনকারী সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বিকাশ এজেন্ট মো. ইমরুল ইসলাম টিটুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তার বিকাশ নম্বরে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ মেলায় তাকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদেরও আটক করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৭
এমআরএম/এএটি/এইচএ/