প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (০৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, শিশু বা নারীর প্রতি সহিংসতা, বৈষম্যমূলক আচরণ বা হয়বানীমূলক কর্মকাণ্ডকে উদ্বুদ্ধ করে এমন কোনো ঘটনা ও দৃশ্য চলচ্চিত্রে প্রদর্শন করা যাবে না।
নতুন চলচ্চিত্র নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো চলচ্চিত্রেই রাষ্ট্র ও জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা সমুন্নত রাখতে হবে। এছাড়া পরিহার করতে হবে চলচ্চিত্রের সংলাপে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষার ব্যবহার।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে মন্ত্রিসভা চলচ্চিত্র নীতিমালা পাস করেছে, সুস্থধারা চলচ্চিত্র যেন সম্প্রসারিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আদর্শ ও চেতনা, সামাজিক মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলচ্চিত্র নির্মাণ, বিতরণ ও প্রদর্শন করতে হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, সুস্থ শিক্ষামূলক ও বিনোদনধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন করতে সরকার এবং বেরকারি পর্যায়ে নীতিগত ও অবকাঠামোগত ও কারিগরি সহায়তা দিতে এই নীতিমালা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চলচ্চিত্রে পরিবেশিত তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা, পেশাগত নৈতিকতা ও নিরপেক্ষতা, চলচ্চিত্র নির্মাণ বিতরণ ও প্রদর্শনীতে দায়িত্বশীলতা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা সমুন্নত রাখতে হবে। কোনো চলচ্চিত্রে কোনোভাবেই রাষ্ট্র ও জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। চলচ্চিত্রে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য পরিবেশন করা যাবে না।
“চলচ্চিত্রে দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবধারার সুষ্ঠু প্রতিফলন এবং এর সঙ্গে জনগণের নিবিড় যোগসূত্র স্থাপন ও সাংস্কৃতিক ধারাকে দেশপ্রেমের আদর্শে অনুপ্রাণিত করার প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবধারার সুষ্ঠু প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সকল ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এবং ধর্মীয় সহিংসতারোধে জনগণকে উজ্জীবিত করতে হবে। ”
ধর্ষণের চিত্র প্রদর্শনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চলচ্চিত্রে সরাসরি কোনো ধর্ষণের দৃশ্য দেখানো যাবে না। শিশু বা নারী কিংবা উভয়ের প্রতি সহিংসতা বা বৈষম্যমূলক আচরণ বা হয়বানীমূলক কর্মকাণ্ডকে উদ্ভুদ্ধ করে এমন কোনো ঘটনা ও দৃশ্য চলচ্চিত্রে প্রদর্শন করা যাবে না।
পাশাপাশি কোনো অশোভন উক্তি, আচরণ এবং অপরাধীদের কার্যকলাপের কৌশল প্রদর্শন, যা অপরাধ সংগটনের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতির প্রবর্তন ও মাত্রা আনতে সহায়ক হতে পারে- এমন দৃশ্য পরিহার করতে হবে। চলচ্চিত্রের সংলাপে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা পরিহার করতে হবে।
নীতিমালায় চলচ্চিত্র আমদানী ও রফতানির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি কমিটি থাকবে। এরা কোনো চলচ্চিত্র আমদানি বা রপ্তানির সুপারিশ করবে।
আর তথ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের জাতীয় চলচ্চিত্র বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি থাকবে। এই কমিটি নীতিমালার আলোকে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন সুপারিশ দেবে।
“সেন্সর শব্দটি একটু নেতিবাচক, নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট বহন করে। এজন্য বিভিন্ন দেশে সেন্সরের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেশন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশেও পর্যায়েক্রমে সেন্সর সিস্টেম বাদ দিয়ে সার্টিফিকেশন সিস্টেম প্রবর্তন করা হবে। ”
চলচ্চিত্রের সৃজনশীলতা বজায় রাখতে কপিরাইট ও অন্যান্য মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের মানোন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধনে যৌথ বিনিয়োগে উৎসাহিত ও বাজার সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট দেশের চলচ্চিত্রের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, প্রযোজক সমন্বয়ে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের নির্মাণ উৎসাহিত করা হবে।
চলচ্চিত্রের জন্য ৬৪ জেলায় ডিজিটাল সিনেপ্লেক্স হবে বলেও জানান শফিউল আলম।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ। প্রেক্ষগৃহগুলো বাণিজ্যিক ভবন হয়ে যাচ্ছে, দোকানপাট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য গভর্মেন্ট ৬৪ জেলার ৬৪টি সরকারি তথ্য ভবন করে দেবে। এ ভবনে একটি করে সিনেপ্লেক্স থাকবে। সরকারি অনুদান দিয়েও বিভিন্ন জেলায় ডিজিটাল সিনেপ্লেক্স করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৭
এমআইএইচ/বিএস
** ৪ গুণ দামে ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুমোদন
**খুলনা হয়ে কলকাতা যেতে চালু হচ্ছে নতুন রুট