মুসা বিন শমসেরের প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে,এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স, রিনিউয়াল ট্যাক্স, রিনিউয়াল অব ফিটনেস ট্যাক্স পুরোপুরি পরিশোধ করা হয়েছে। গাড়িটি তিনি ফারুক-উজ-জামান চৌধুরীর কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন।
অন্যদিকে তার ছেলে ববি হাজ্জাজ প্রতিবাদলিপিতে বলেছেন, সরকার মানি লোকের মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। শুধু তাই নয়, বিগত দিনগুলোতে দেখেছেন রাজনৈতিক কারণে মানি লোকের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, আ’লীগ আমার পরিবারের সম্মান নিয়েও ছিনিমিনি খেলছে। এবং সরকার নোবেলজয়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদেরও সম্মানহানি করেছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী গাড়িটির এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স, রিনিউয়াল ট্যাক্স, রিয়াল অব ফিটনেস ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন, কিন্তু সেটা হালনাগাদ নয়। সুতরাং জব্দ করা গাড়িটি তিনি ও তার পরিবার অবৈধভাবেই ব্যবহার করেছেন।
অন্যদিকে গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্যাদি যাচাই করে দেখা যায়, ফারুকুজ্জামানের বর্তমান ঠিকানা বটতলা রোড, চরফ্যাশন ভোলা ও স্থায়ী ঠিকানা চৌধুরী বাড়ী,দিলালপুর,পাবনা উল্লেখ করা হয়েছে। আর পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে উল্লেখিত কোনো ঠিকানায় ফারুকুজ্জামানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। সুতরাং গাড়িটি ভাড়ায় ব্যবহারের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া গাড়িটি আটকের সময় মুসা বিন শমসের গাড়িটি যে ভাড়ায় ব্যবহার করছেন তারও কোনো উপযুক্ত প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি।
আরও জানা যায়, গাড়িটি ২০১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত। এর চেচিস নং এসএএলএলএমএএমসি ৩৫এ১৮১৯০ এবং এটি দপ্তরের মোস্ট ওয়ান্টেড গাড়ির তালিকাভুক্ত। শুল্ক গোয়েন্দারা অনুসন্ধানে আরও তথ্য পেয়েছেন যে,মুসা বিন শমসের ব্যক্তিগত কাজের উদ্দেশ্যে ফারুকুজ্জামানের নামে গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন করেছেন। ভোলা বিআরটিএ অফিস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিবন্ধনকালে বিল অব এন্ট্রি নং সি ১০৪৫৯১১। তারিখ ১৩-১২-২০১২ এর মাধ্যমে প্রায় ১৭ লাখ টাকা শুল্ককরাদি পরিশোধ করেছেন। কিন্তু কাস্টম হাউসের তথ্যভাণ্ডারে ট্যাক্স প্রদানের কোনো তথ্য নেই। তাই বি/ই ভুয়া বলে বিবেচিত।
অপরদিকে গাড়িটি কারনেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় শুল্কমুক্ত হিসেবে ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের নাগরিক ফরিদ কবির চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পুন:রপ্তানি করার শর্তে আমদানি করেছেন। উক্ত শর্ত পরিপালন না করে গাড়িটি ভোলা বিআরটিএ অফিস থেকে ভুয়া দলিলাদির মাধ্যমে ভোলা ঘ-১১-০০৩৫ হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, শুল্ক গোয়েণ্দাদের অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে, আমদানিকালে গাড়িটি ছিলো রূপালি রঙের (সিলভার কালার)। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনকালে গাড়ির রং সাদা। আর আটককালে রং পাওয়া যায় কালো। অর্থাৎ, শুল্ক গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে গাড়িটির রঙ বারবার বদল করা হয়েছে। ফলে শুল্ক গোয়েন্দা-তথ্য অনুযায়ী, এক্ষেত্রে মুসা যদি কোনো অন্যায্য সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন তাহলে তিনি সমান অপরাধী। এছাড়া অবৈধভাবে গাড়িটি তার দখল থেকে উদ্ধার করার অর্থ হচ্ছে, আইন অনুযায়ী তিনিও সমান অপরাধী।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কারনেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় গত ১৫-৩-২০১০ তারিখে খালাসকৃত গাড়িটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুন:রপ্তানি করতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২৯-১২-২০১৩ তারিখে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস শুল্ক করাদি পরিশোধের জন্য এই গাড়িটির উপর দাবিনামা জারি করে।
এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.মইনুল খান বাংলানিউজকে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দারা প্রাথমিক তদন্তে গাড়িটি সম্পর্কে যে তথ্য পেয়েছেন তাতে ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। তার বক্তব্য যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন নাটকীয়তা শেষে গুলশান ২ এর বাড়িতে অভিযানের সূত্র ধরে ২১ মার্চ বিকেলে ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে মুসা বিন শমসেরের অবৈধভাবে ব্যবহার-করে-আসা রেঞ্জ রোভার গাড়িটি আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ০৩ এপ্রিল, ২০১৭
এসজে/জেএম