ঢাকা, শনিবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ফার্মগেট পার্কে লেগুনা স্ট্যান্ড!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৭
ফার্মগেট পার্কে লেগুনা স্ট্যান্ড!  পার্কে লেগুনা স্ট্যান্ড, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: যাত্রী ওঠানোর জন্য চলছে চালক-হেলপারদের হাঁক-ডাক। লম্বা লাইনে যাত্রীবোঝাই করে গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে লেগুনাগুলো। নাহ! এটা কোনো  লেগুনা স্ট্যান্ডের চিত্র নয়। এটা রাজধানীর ফার্মগেট পার্কের দৃশ্য।

শিশু-কিশোর-বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষের একটুখানি বিনোদনের কেন্দ্র পার্ক। নগরজীবনের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে; একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পার্কে আসেন মানুষ।

ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের আনোয়ারা পার্কটিও সেজন্যই গড়ে তোলা হয়েছিল (অবশ্য এটি ফার্মগেট পার্ক নামেই বেশি পরিচিত)। কিন্তু এলাকাবাসীর চিত্তবিনোদনের, হাঁটাচলার, শিশুদের খেলবার সুযোগ কেড়ে নিয়েছে লেগুনা-দুর্বৃত্তরা। পার্ক হয়ে উঠেছে লেগুনা স্ট্যান্ড। আর এটা যাদের দেখার কথা তা দেখেও দেখছে না। কিছু বলছে না।  

ছোট্ট এই পার্কটি ঘুরে দেখা যায় ভেতরে সারি সারি লেগুনা। এখান থেকে রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, ঝিগাতলা, ৬০-ফিট, মিরপুর ১০ নম্বর, মহাখালী, বাড্ডা লিংক রোডের উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে আসা–যাওয়‍া করছে লেগুনাগুলো। আগে পার্কের পাশে ইন্দিরা রোডে ছিলো এই লেগুনা স্ট্যান্ডটি।

জানা যায়, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) উপলক্ষে  নগরীর নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য বাড়াতে ইন্দিরা রোড থেকে লেগুনাগুলোকে হটিয়ে দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ-সুযোগে লেগুনার মালিক-চালকরা ফার্মগেট পার্কে অস্থায়ী লেগুনা স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলেছে।
 
ফার্মগেট পার্ক নামে পরিচিত এই পার্কটির ওপর এমন উপদ্রব এবারই প্রথম নয়। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে কুতুববাগীর বিশ্ব জাকের ইজতেমার কারণে এই পার্কটি  মাস খানেক ধরে বন্ধ থাকে।

কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পার্কটি ধুলোবালি আর আবর্জনাময় হয়ে থাকে সবসময়। দুর্গন্ধ আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ গোটা পার্কজুড়ে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা সংকট আরেক বড় সমস্যা এখানে। দিনে ছিন্নমূল, ভাসমান মানুষ আর সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবী, বিক্রেতা, যৌনকর্মী ও বখাটেদের দখলে চলে যায় এটি। স্বচ্ছন্দে হাঁটা যায় না, বিশ্রাম নেওয়ার কোনো সুযোগ একেবারেই নেই এখানে। নিরাপত্তার অভাব। পরিবেশও এতোটাই নোংরা যে এখানে দুদণ্ড বসে বিশ্রাম নেওয়ার কথা কল্পনাতেও আনে না কেউ। দুর্গন্ধে বমি আসে। এছাড়া দিন-দুপুরে চলে গাঁজা বেচা-কেনা। সন্ধ্যা নামতেই এটি হয়ে ওঠে নেশাখোরদের আড্ডাখানা। এত সব অব্যবস্থাপনার মধ্যে ‘এবার মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে নতুন উপদ্রবের নাম ফ্রিস্টাইল ‘ লেগুনা স্ট্যান্ড’।

ইঞ্জিনের শব্দ, হর্ন, চালক-হেলপারদের ডাকাডাকিতে পুরোদস্তুর লেগুনা স্ট্যান্ডে রূপ নিয়েছে পার্কটি।

ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা আলম বাংলানিউজকে বলেন, কোনো বিবেচক মানুষ পার্কের মধ্যে গাড়ি রাখার সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। রোডের উপর লেগুনা স্টেশন এটাই তো অনৈতিক। তার উপর আবার পার্কে রেখে দিয়েছে। একটু বসার জায়গা পর্যন্ত নেই। আমার তো মনে হচ্ছে লেগুনা মালিকরা এখানে স্থায়ী হয়ে যাবে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্দিরা পরিবহনের এক চালক বলেন, পুলিশ উঠায় দিছে। লেগুনা রাখার কোনো জায়গা ন‍াই, তাই এখানে রেখেছি। কয়েকদিন পর আবার সরায় ফেলাবো।
 
প্রথমে লেগুনা রাখার কোনো জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে স্থানীয় এক নেতার হস্তক্ষেপে পার্কের মধ্যে লেগুনা রাখার মৌখিক অনুমতি পাওয়া যায়। ফার্মগেট এলাকার বেশিরভাগ লেগুনার মালিক চুন্নু মিয়া নামে এই নেতা। জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই লেগুনাচালক।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৭
এমসি/এমইউএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।