ঢাকা, শনিবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের কব্জাবন্দি ডিজিটাল পাঠদান!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৭
বগুড়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের কব্জাবন্দি ডিজিটাল পাঠদান! কব্জাবন্দি ডিজিটাল পাঠদান, ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: প্রায় ৬২০টির মত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী। এসবের মধ্যে রয়েছে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ও ছবি দেখানোর পর্দা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্যই সরকারের এই উদ্যোগ। বগুড়ার শতাধিক প্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতিতে চালানো হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।

বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোয় এখনো লাগেনি বিদ্যুৎ সংযোগ। এ কারণে প্যাকেটবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী।

ধূলোবালিতেও অনেক সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কক্ষে পড়ে থেকে। অনেক ল্যাপটপ আবার শিক্ষকদের বাসাবাড়িতে চলে গেছে। এগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এতে করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রমের সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজারো কোমলমতি শিক্ষার্থী। বগুড়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের খামখেয়ালিপনাই সরকারের নেওয়া এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে। সবমিলিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অসহযোগিতার বলি স্কুলের ডিজিটাল পাঠদান কার্যক্রম!

বগুড়া জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তার কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, এজেলায় প্রায় ১হাজার ৫৬৮টির মত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা (সংযোগ) নেই।

 সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার তথ্য বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেক আগেই প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের কথা ও কলমের মারপ্যাঁচ চলছেই। তাই বিদ্যুৎহীন বিদ্যালয়গুলোয় বিদ্যুৎ সংযোগ লাগছে না। অচিরেই লাগবে এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।

জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলায় রয়েছে ১০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসবের মধ্যে মাত্র ৪৮টি বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। বাদবাকি বিদ্যালয়গুলোতে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ লাগেনি। তাই চালু করা যাচ্ছে না মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম।
 
অথচ বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের খুব কাছ দিয়ে গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যকরি পদক্ষেপের অভাবে মিলছে না বিদ্যুৎ সংযোগ। এ নিয়ে হতাশায় রয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

দলগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আজম বাংলানিউজকে জানান, মাত্র একটি খুঁটির অভাবে বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। বগুড়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ নন্দীগ্রাম সাব-জোনাল অফিসে বারবার ধর্ণা দিয়েও এখনো পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি।
বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও যোগ করেন এই প্রধান শিক্ষক।

জেলার বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্রটা এমন। বিশেষ করে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরো হতাশাব্যঞ্জক।   গ্রাম পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে টালবাহানা ও হয়রানির চূড়ান্ত করছেন। এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক।

সোমবার (০৩ এপ্রিল) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী বাংলানিউজকে জানান, প্রায় চার বছর আগে ১২টি বিদ্যালয়ে প্রাথমিকভাবে এ জেলায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে শতাধিক বিদ্যালয়ে এ পদ্ধতিতে পাঠদান চলছে।

তবে মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী শিক্ষকদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন--এমন তথ্য তার জানা নেই। তবে এ বিয়ষে তিনি খোঁজখবর নেবেন বলেও জানান।  

বিদ্যুৎ সংযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, জেলার সবক’টি প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে বলে আশাবাদী এই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে তার এই আশাবাদের ভিত্তি কি তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুফিয়া নাজিম (শিক্ষা ও আইসিটি) বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৬২০টি প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে যাবতীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে তারা কেন এখনো সংযোগ দিচ্ছে না তা এখন খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া ৫০শতাংশ প্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার নির্দেশনাও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দেওয়া হয়েছে।

বগুড়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর এজিএম জোবায়ের আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়গুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে এরই মধ্যে ডিজাইনসহ মাস্টারপ্লানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে এ কাজ করা হয়েছে। দরপত্রের কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।
 
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, সরবরাহ লাইনের ১৩০ ফুটের মধ্যে যেসব বিদ্যালয়ে রয়েছে এবং যেগুলোতে ওয়ারিং-কাজ-করা-আছে সেগুলোতে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ হয়রানি ও কালক্ষেপণ করছে বলে যে অভিযোগ তা ঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি।          

 বাংলাদেশ সময়: ০৪২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।