এই তথ্য জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ইয়াং পার্লামেন্টারিয়ান্স প্রেসিডেন্ট ও আফ্রিকান দেশ উগান্ডার সংসদ সদস্য মাউরিন অসোরু (maureen Osoru) ।
মঙ্গলবার (০৪ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আইপিইউ মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের চতুর্থ দিনে ‘ফোরাম অব ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ান্স’-এ সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট উগান্ডার তরুণ সংসদ সদস্য মাউরিন অসরো (২৬) (maureen Osoru) ও আইপিইউ‘র জেন্ডার পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের প্রধান জিইনা হিলাল (Zeina Hilal) এসব তথ্য জানান।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫-১৬ সালে ১২৮ দেশের পার্লামেন্টের ওপর ইয়ুথ পার্টিসিপেশন ইন ন্যাশনাল পার্লামেন্ট ২০১৬’ শীর্ষক এ গবেষণা জরিপ চালায়। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, বিশ্বের ৫৭ শতাংশ ভোটারের বয়স ২০ থেকে ৪৪ বছর। এদের মধ্যে ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণ সংসদ মাত্র ১দশমিক ৯ শতাংশ।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, বিশ্বে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৩০ বছরের কম বয়সী সংসদ সদস্য আছেন মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ। আর ৪০ বছরের নীচে সংসদ সদস্য রয়েছেন মাত্র ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। ৪৫ বছরের নিচে বয়স রয়েছে ২৬ শতাংশ সংসদ সদস্যের।
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, বিশ্বে ২০ থেকে ৪৪ বছর বয়সসীমার ভোটারের হার ৫৭ শতাংশ। অথচ তরুণ নেতৃত্বের হার অত্যন্ত নগণ্য।
বিভিন্ন দেশের তরুণ সংসদ সদস্যদের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, বিশ্বে সবচেয়ে তরুণ এমপি রয়েছে সুইডেনে। দেশটিতে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ সংসদ সদস্যের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে। ইকুয়েডর দ্বিতীয় অবস্থানে। ওই দেশে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। তৃতীয় স্থানধারী ফিনল্যান্ডে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ আর চতুর্থ স্থানধারী নরওয়েতে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।
৪০ বছরের কম বয়সী সংসদ সদস্যদের মধ্যে ডেনমার্কে রয়েছে ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ, এনডোরায় ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ ও ইকুয়েডরে ৩৮ শতাংশ।
৪৫ বয়সের নিচে রয়েছে ওমানে ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ইথিওপিয়ায় ৬৩ দশমিক ৬ এবং এনডোরায় ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ। গবেষণায় ২০ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদেরকে এ সমীক্ষায় তরুণ এমপি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, আমেরিকা-ইউরোপ-আফ্রিকার দেশগুলোতেই ৩০ বছরের নিচের বয়সী সর্বাধিক সংখ্যক সাংসদ রয়েছেন। তরুণ এমপিদের মধ্যে পুরষ ও নারীর অনুপাত হচ্ছে ৬০:৪০। মাত্র ন’টি দেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনে ৫০ শতাংশ এমপি নির্বাচিত ৪৫ বছরের নিচের বয়সীরা। বিশ্বে এক দশমিক ২ বিলিয়ন (১২০ কোটি) তরুণ ভোটার রয়েছেন।
ফোরাম অব ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ান্স-এর প্রেসিডেন্ট মাওরিন জানান, সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব খুবই নগন্য। তরুণরা রাজনীতিতে আসতে অনীহাও প্রকাশ করে। কিন্তু আইপিইউ সম্মেলন তরুণদের ভোটের রাজনীতিতে আরো সক্রিয় করতে ভূমিকা রাখবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে তরুণদের নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে অর্থ, ভোটারদের সাড়া পাওয়া, রাজনীতির মনোনয়ন নিশ্চিত করাসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাদের সামনে।
নিজের দেশের বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি তুলে ধরে মাউরিন জানান, ১৮ বছর বয়সে সবাই প্রাপ্তবয়স্ক হয়। এসময় তাকে সাজার আওতায় এনে প্রয়োজনে জেলেও পাঠানো হয়। কিন্তু একই বয়সে কাউকে সংসদে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না।
সুখের বিষয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ইয়ং উইং থাকে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে তরুণরা নিজেদের তৈরি করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে নিতে পারে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রেসিডেন্ট মাউরিন বাংলানিউজকে বলেন, তরুণ এমপি হিসেবে অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। বিশেষ করে নমিনেশন পেতে গেলে নানা বাধা ও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। যেমন, ‘তুমি কি করবে? তুমি এখানে কিভাবে কাজ করবে?। এটা তো মোটেই সহজ কাজ না। ’ তবে পরিবর্তনের জন্য, অচলায়তন ভাঙার জন্য তরুণদেরই এগিয়ে আসতেই হবে।
তার দেশে এই মুহুর্ত ৪ জন তরুণ সাংসদ রয়েছেন। এছাড়া আইপিইউর চলমান সম্মেলনেও ৩০ বছরের কম বয়সী ১২জন সংসদ সদস্য যোগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৭
এসএম/জেএম