বেনাপোল বন্দরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাক চালকদের এরকম জীবন যাপন দেখা যায় রোজই।
এমনই একজন ট্রাকচালক বলবীর সিংহের সঙ্গে সোমবার (০৩ এপ্রিল) রাতে কথা হয়।
বলবীর জানান, তিনি কারও উপর নির্ভরশীল হতে চান না তাই পরিশ্রম করেন। শ্রীনগর থেকে ১৫ দিন ধরে গাড়ি চালিয়ে তিনি বেনাপোল বন্দরে পৌঁছান। এখানে পৌঁছানোর ১২ দিন পর তার ট্রাকের পণ্য খালাস হয়।
এই পণ্য বহনের জন্য ট্রাকের মালিক ভাড়া পাবেন এক লাখ ১৫ হাজার আর তার (বলবীর সিংহ) মাসিক বেতন ১২ হাজার রুপি। গাড়িতে তার একজন সহযোগী (হেলপার) রয়েছেন। তার বেতন সাত হাজার রুপি।
বিহার থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালক অমিত কর্মকার, অবিনাশ, রাহুল ও বিপিন দাস। বন্দরে পণ্য খালাস শেষে দেশে ফিরছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর ফিরতে পারেননি। তারা চারজনই একই এলাকার মানুষ। তাই একসঙ্গে রাতে খাওয়ার জন্য ট্রাকে রান্না চড়িয়েছেন। তাদের হাতে তৈরি রুটি ও সবজির ঘ্রাণ যেনো মাতিয়ে তুলেছে চারপাশ।
তারা জানালেন, বর্তমান উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারের অনুপাতে তাদের বেতন কম। বেনাপোল বন্দরে খাওয়ার জন্য ক্যান্টিন থাকলেও সেখানে খাবারের দাম অনেক বেশি। তাই ট্রাকে নিজেরাই রান্না করছেন। রাতে ঘুমাবেন ট্রাকের উপরে খোলা আকাশের নিচে। পথে থাকতে থাকতে এমন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন সবাই।
বন্দরের গেটের সামনে গভীর রাত পর্যন্ত না ঘুমিয়ে জেগে থেকে তাস খেলে সময় পার করছেন কয়েকজন ট্রাকচালক।
কথাপ্রসঙ্গে তারা বলেন, বন্দরে পণ্যজটের কারণে ভিতরে ট্রাক নিয়ে ঢুকতে পারেননি। তাই ট্রাক নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
তাদের অভিযোগ, এখানে চোরের খুব উপদ্রব। বন্দরের নাইট গার্ডকে টাকা দিয়েও কোনো নিরাপত্তা মেলে না। সুযোগ পেলে চোরেরা ট্রাক থেকে পণ্য নামিয়ে নেন আবার ছিনতাই করেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয় না। গাড়ি চালিয়ে কতো আর রোজগার। চুরি হলে মালিক বেতন থেকে কেটে নেন। তাই না ঘুমিয়ে তাস খেলে রাত পার করছেন।
বরুন সাহার বাড়ি ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার বঁনগা শহরে। বছর ১২ আগে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটি ট্রাক কেনেন। এখন তার ৪টি ট্রাক। ৩টি ভাড়ায় চালাচ্ছেন আর একটি নিজেই চালান। ব্যস্ততার কারণে অনেক রাত তার পথেই কেটে যায়।
ভেবেছিলেন, এবার পণ্য খালি করে কলকাতা যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে বউ-ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একটু দেখা করে যাবেন। কিন্তু একটা ভালো ভাড়ার খবর পাওয়ায় তাকে ছুটতে হচ্ছে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না। তিনি ৪টি ট্রাকের মালিক হলেও তার ভিতরে কোনো দম্ভ নেই। অন্য সাধারণ চালকের মতো তিনিও ট্রাকে রাত কাটান। তার স্বপ্ন, দুই বছর পর পর একটি করে গাড়ি বাড়াবেন।
ভক্তির সঙ্গে ট্রাকে রাখা ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় দিল্লি থেকে পণ্য নিয়ে আসা চালক দীপঙ্কর পান্ডেকে।
দীপঙ্কর বলেন, ট্রাকেই আমার সংসার। মাসের পর মাস ট্রাকে থাকতে হয়। তাই চলার পথে প্রয়োজনীয় সবকিছু সঙ্গে আছে। সবসময় শূন্যের ওপর থাকি। চোখের পলকে বিপদ হতে পারে। তাই যতোবার ট্রাকে বসি ঠাকুরকে প্রণাম করি। তিনি যেনো বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
বেনাপোল বন্দরে কর্মরত বাংলাদেশ স্থলবন্দর ইমপ্লোয়েজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে বন্দরে স্থান সংকটের কারণে এসব পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাককে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
বন্দরে পণ্য খালাসের জায়গা সংকট কেটে গেলে এসব অভিযোগ আর থাকবে না বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৭
এজেডএইচ/এসএনএস