ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সাক্ষাৎকার-২

বৈদ্যুতিক গোলযোগেই ৭৫ শতাংশ অগ্নিকাণ্ড

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৭
বৈদ্যুতিক গোলযোগেই ৭৫ শতাংশ অগ্নিকাণ্ড বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান;ছবি-বাদল

ঢাকা: যে কোনো দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় প্রথম সাড়াদানকারী সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস। গতি, সেবা ও ত্যাগের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এ বিভাগের কর্মীরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মানুষের সেবায় নিয়োজিত। দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় প্রথম সাড়া দেয়াই এই বিভাগের প্রতিটি কর্মীর নৈতিক দায়িত্ব। তাদের পর্যালোচনা উঠে এসেছে, অগ্নিকাণ্ডের ৭৫ শতাংশই ঘটে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি)।

সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ফায়ার সার্ভিসের সাফল্য, সীমাবদ্ধতা, স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।



সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আবাদুজ্জামান শিমুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও প্রশান্ত মিত্র। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: সবচেয়ে বেশি কোন কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে?

উত্তর: এক সময় আগুন লাগতো তুলা, কার্পেট বা পাটের গোডাউনে। কিন্তু বর্তমানে এর মাত্রা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন বিভিন্ন স্থানে কেমিক্যাল, পেট্রোলিয়াম ও সিন্থেটিক পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। সেখানে আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সারা দেশে প্রতিবছর ১৬ থেকে ১৭ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ৭৫ শতাংশ ঘটনাই ঘটছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে।

নগরীর পুরাতন ভবনগুলোতে নির্গমন-বর্হিগমন পথ নেই, ওই ভবনগুলোতে একই সঙ্গে গ্যাসলাইন, বৈদ্যুতিক লাইন, ক্যাবল লাইনসহ সব লাইন এক সঙ্গে চলে যাচ্ছে। এটাই ঝুঁকির বিষয়। কারণ আগুন লাগলে ওই তার দিয়ে আগুন দ্রুত উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রশ্ন: আগুন নিয়ন্ত্রনে চ্যালেঞ্জ বেড়ে গেছে কী না?

উত্তর: অবশ্যই, আগের দিনগুলো থেকে ফায়ার সার্ভিসের চ্যালেঞ্জ এখন অনেক বেড়ে গেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ ও মহড়ার মাধ্যমেই আমাদের ঝুঁকি কমাতে হবে। আর এই প্রস্তুতি সর্বস্তরেই নিতে হবে।
বাংলানিউজ টিমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান প্রশ্ন: এ থেকে পরিত্রাণ পেতে করণীয় কী?

উত্তর: বাসা-বাড়িসহ সকল ভবনের বৈদুতিক লাইনগুলো প্রতি মাসে বা একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরীক্ষা করতে হবে। আগুন লাগার পর বেশি সময় দেওয়া যাবে না। যখন আগুন ছোট থাকে তখনই ওই ভবনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা থাকলে তা নিভানো সম্ভব। কিন্তু যদি আগুনকে সময় দেয়া হয় তবে এটা ছড়িয়ে বড় আকার ধারণ করবে। তখনই এটা কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাবে। যতই পানি দেয়া হোক না কে, সেখানে আর কিছুই করার থাকে না।

বাড়ি, কল-কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগলে সেখানে প্রস্তুতি আছে কি না সে বিষয়টি ভাবার সময় এসেছে। কারণ আগুন লাগার সাথে সাথেই ফায়ার সার্ভিস আসবে না। নিজেদেরও এর প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

প্রশ্ন: এ ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস কী উদ্যোগ নিচ্ছে?

উত্তর: এজন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার কর্মীকে আগুন প্রতিরোধের ট্রেনিং দিয়ে থাকে। প্রতি বছর ট্রেনিং প্রোগ্রামের প্যাকেজ হাতে নেওয়া হয় ৫ হাজারের মত। বিভিন্ন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে মহড়া দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজারের মত। এ পর্যন্ত ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রতি মাসেই বিভিন্ন কল-কারখানায় ফায়ার হ্যাজার্ড রিকস কতটুকু আছে সেটিও সার্ভে করা হচ্ছে।

এছাড়া, ভবন ও কল-কারখানা তৈরির ক্ষেত্রে সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে, ফায়ার ফাইটিংয়ের ব্যবস্থা আছে কি না, ফায়ার কোড মেনে তা নির্মাণ করা হয়েছে কি না।

প্রশ্ন: ধোঁয়ার কারণেই কি মানুষ বেশি মারা যাচ্ছে?

উত্তর: এখন বিভিন্ন রাসায়নিক ও সিনথেটিক পদার্থে আগুনের কারণে এক ধরনের ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়, এই ধোঁয়ার কারণেই মানুষ মারা যাচ্ছে। আগুনে পুড়ে মানুষ কম মারা যাচ্ছে। আমরা ভয় পাচ্ছি, বর্তমানে ভবনগুলোতে আগুন লাগলে মানুষ ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস নিতে না পেরে মারা যাবে।

প্রশ্ন: তাহলে করণীয় কী?

প্রশ্ন: এ সমস্যা মোকাবেলায় যারা ইঞ্জিনিয়ার আছেন তারা যেন ভবনের বাইরে পাশে একটি স্কেপ রুট রাখেন। সেখানে প্রতিটি তলায় ফায়ার ডোর রাখতে হবে। আগুন লাগলে মানুষ যেন একটি নিরাপদ পথে বাইরে চলে আসতে পারে। বর্তমানে নতুন ভবনগুলোতে এটা করা হচ্ছে আর পুরোনো ভবনগুলোতে থাকলেও সেখানে আসবাবপত্র দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৭
এজেডএস/এসজেএ/পিএম/আরআই

**
মিসড কল পেলেও রেসপন্স করে ফায়ার সার্ভিস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।