ফলে দুদকের অনুসন্ধানে দুর্নীতির প্রমাণ মেলায় তার বিরুদ্ধে মামলাও করছে কমিশন।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মো.আলী আজম মিঞা ১৯৯১ সালের ২০ আগস্ট জরিপকারক হিসেবে রাজউকে যোগদান করেন।
আলী আজমের ২০০৮-০৯ কর বছরের রিটার্নে দেখা যায়, তার ক্রমপুঞ্জিভূত অর্থের পরিমাণ ছিলো ৮ লাখ টাকা। যার উৎস তিনি জানাতে পারেননি। আয়কর নথি অনুযায়ী ২০০৮-০৯ কর বছর থেকে ২০১৬-১৭ কর বছর পর্যন্ত মোট আয় ২ কোটি ২২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৮ টাকা। এর মধ্যে ভুয়া জমি বিক্রির অবৈধ আয় ৯৫ লাখ টাকা। মোট ব্যয় ১ কোটি ৫১ লাখ ১ হাজার ৫৬৫ টাকা। হাউজ বিল্ডিং লোন পরিশোধ মোট ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৪০৯ টাকা। অপরিশোধিত এইচবিএফ’র মোট দায় ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৩ টাকা।
আলী আজম জিজ্ঞাসাবাদে দুদক কর্মকর্তাকে বলেন, তার নানি মোছা. জেবুন নেছা তাকে ১.৫০ একর জমি ৪শ’ টাকার বিনিময়ে হেবা করে দেন। পরবর্তীতে ওই জমি হতে তিনি ১ একর জমি ময়মনসিংহের মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ৯৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেন এবং ওই টাকা উত্তরায় বাড়ি নির্মাণে ব্যয় করেন।
কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তিনি ভুয়া দলিল তৈরি করে স্বার্থ হাসিল করার জন্য ৯৫ লাখ টাকার ভুয়া জমি বিক্রি করেছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অবৈধ পথেই তিনি এই অর্থ উর্পাজন করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এছাড়া আয়কর নথি অনুযায়ী তিনি বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন ২০০৯-১০ কর বছরে। নির্মাণ কাজ শেষ করেন ২০১২-১৩ কর বছরে। আর সম্পদ বিবরণীতে নির্মাণ ব্যয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ২৫ লাখ ৪৫ হাজার ৭শ’ টাকা। যার মধ্যে নানি কর্তৃক ভুয়া হেবা ও ভুয়া হেবার জমি বিক্রির ৯৫ লাখ টাকা রয়েছে।
এছাড়া আয়কর নথি অনুযায়ী, ২০১২-১৩ কর বছরের পর তার বাড়ি নির্মাণের আর কোনো ব্যয় পাওয়া যায়নি। আর আয়কর নথি অনুযায়ী আলী আজমের ২০০৯-১০ কর বছর থেকে ২০১২-১৩ কর বছর পর্যন্ত মোট আয় ছিলো ৬৬ লাখ ২৭ হাজার ৩১৪টাকা এবং ২০০৮-০৯ কর বছর থেকে ২০১২-১৩ বছর পর্যন্ত মোট ব্যয় ছিলো ৩১ লাখ ৭৯ হাজার ৭০১ টাকা। অবশিষ্ট থাকে ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৩ টাকা।
শুধু তাই নয়, গণপূর্ত বিভাগের দক্ষ প্রকৌশলী দ্বারা আলী আজমের উত্তরার বাড়িটি পরিমাপ করে নির্মাণ ব্যয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৮২ লাখ ৩২ হাজার ৮১৫ টাকা। এক্ষেত্রে তার উত্তরার বাড়ি নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয় দায় বাদে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮৫ হাজার ২০২ টাকা তার জ্ঞাত আয় বহিঃর্ভূত সম্পদ। এছাড়া ওই টাকার মধ্যে তার গোপন সম্পদের পরিমাণ ৫৬ লাখ ৮৭ হাজার ১১০ টাকা।
এছাড়া আয়কর নথিতে তার বাড়িটি ৫ তলা পর্যন্ত উল্লেখ রয়েছে। আর সম্পদ বিবরণী ও নকশায় বাড়িটি ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত উল্লেখ করা আছে।
দুদকের পরিমাপকালে দেখা যায়, ৭ম তলায় তিনি একটি ইউনিট আন অথরাইজডভাবে তৈরি করেছেন। ফলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আলী আজম মিঞার সর্বমোট সম্পত্তি ২ কোটি ২২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৮ টাকা। আর জ্ঞাত আয় বহিঃর্ভূত সম্পদ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮৫ হাজার ২০২ টাকার মধ্যে গোপন সম্পদের পরিমাণ ৫৬ লাখ ৮৭ হাজার ১১০ টাকা।
এ বিষয়ে দুদক সচিব আবু মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, রাজউক কর্মকর্তা আলী আজম অবশ্যই দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। কমিশনের অনুসন্ধানে তিনি যে অবৈধভাবে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সেটি প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য কমিশন মঙ্গলবার ( ৪ এপ্রিল) তার বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় ১ কোটি ৪৭ লাখ ৮৫ হাজার ২০২ টাকার জ্ঞাত আয় বহিঃর্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ৫৬ লাখ ৮৭ হাজার ১১০ টাকা সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব শিগগিরই অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক রাহিলা খাতুন তার বিরুদ্ধে মামলাটি করবেন বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৭
এসজে/আরআইএস/জেডএম