এভাবেই আহাজারি করে বাংলানিউজকে মনের কষ্টগুলো বলছিলেন হাকালুকি হাওর পাড়ের কৃষক মকবুল মিয়া।
বুধবার হাকালুকি হাওর ও কাউয়াদিঘি হাওরে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ওখানকার মানুষের সারা বছরের খাবার ও জীবিকা নির্ভর করে বোরো ধান ঘরে তোলার ওপর।
কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি জুড়ী, ফানাই, কন্টিনালা ও সোনাই নদী এবং হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর, কাউয়াদিঘি হাওরসহ ছোট-বড় কয়েকটি হাওরে এসে বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
পানিতে তলিয়ে থাকায় ধানগাছ পঁচে নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় চাষিরা এ বছর বোরো ধান ঘরে তুলতে পারবেন না বলে হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেক কৃষক পানির নিচে তলিয়ে থাকা কাঁচা ধান কেটে ঘরে তুলছেন।
মৌলভীবাজারের জুড়ী, কুলাউড়া ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বিস্তৃত অংশ নিয়ে হাকালুকি হাওর। এখানকার বোরো ফসল আট থেকে ১০ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রতিটি হাওরে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা মাঠ পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের চেষ্টা করছি। তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৯৫ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
তিনি আরও জানান, সদর উপজেলার কাঞ্জার হাওর, মানিক হাওর, হাইল হাওর ও কাউয়াদিঘি হাওর পানির নিচে তালিয়ে গেছে। এতে সদর উপজেলায় ৬২৫ হেক্টর, শ্রীমঙ্গলে ৩০৭ হেক্টর, রাজনগরে এক হাজার ৩৬৫ হেক্টর, কমলগঞ্জে ৩০০ হেক্টর, কুলাউড়ায় চার হাজার ৫০০ হেক্টর, জুড়ীতে চার হাজার ৬৫০ হেক্টর, বড়লেখায় তিন হাজার ৪১৫ হেক্টরসহ মোট ১৪ হাজার ৮৬২ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
এছাড়া কমলগঞ্জে ৫০ হেক্টর ও বড়লেখায় ৩০ হেক্টর খেতের সবজি তলিয়ে গেছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংঙ্কর চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, জেলার মনু, ধলাই, ফানাই, বিলাস ও জুড়ী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আগাম বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। জুড়ি উপজেলার বেলাগাঁও গ্রামের কৃষক আকমল হোসেন বলেন, পয়লা বৈশাখে নবান্ন উৎসব হয় হাওরপারের এই গ্রামে। কিন্তু এ বছর নবান্ন উৎসবের আমেজ থাকবে না। কারণ কোনো কৃষক একমুঠো পাকা ধান ঘরে ওঠাতে পারেনি।
কয়েকজন কৃষক জানালেন, তারা বিভিন্ন ব্যাংক, সমিতি ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে জমি চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন এবং সংসার চালাবেন এ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ০৬ এপ্রিল, ২০১৭
আরএ