এবার বর্ষবরণের প্রথম দিককার শিল্পীরাসহ শতাধিক শিল্পী সুরের মূর্ছনায় মুছে দেবেন বিগত দিনের গ্লানি। সব জরাকে দূর করে মানবতার আহ্বানে গাইবেন জয়গান।
ছায়ানট প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ সালে। ১৯৬৭ সালে রমনা পার্কের বটমূলে প্রথমবারের মতো আয়োজন করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। প্রতি বছর একটি বিষয়কে প্রতিপাদ্য হিসেবে নিয়ে ছায়ানটের শিল্পীরা সঙ্গীতের অবগাহনে বরণ করেন নতুন বাংলা বছরকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে সুবর্ণ জয়ন্তীর আয়োজন হিসেবে যোগ হচ্ছে নতুনত্ব।
আয়োজকরা জানান, রমনা বটমূলে প্রথমদিকে যারা গেয়েছিলেন, এবার তাদের সকলকে এনে অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে অনেকেই গত হওয়ায় এবং কেউ কেউ বিদেশে থাকায় তাদের সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়নি। কিন্তু একজন অবশ্যই থাকছেন এবারের আয়োজনে। প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ান এবার গাইবেন ছায়ানটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
আগামী শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানটি শুরু হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে। মানবতার বারতা ছড়িয়ে দিতে আয়োজনের শুরুতেই থাকবে সরোদ বাদন। সরোদে সুরের মূর্ছনা ছড়াবেন রাজপুর চৌধুরী।
সরোদ বাদন শেষে শুরু হবে পঞ্চকবির গান। আয়োজনের মূল আকর্ষণ হিসেবে পরিবেশিত হবে পঞ্চকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রজনীকান্ত সেন, অতুল প্রসাদ সেন ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান। পরিবেশন করা হবে অন্যদের কালজয়ী সব গানও।
ছায়ানটের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠান শেষ হবে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে। তারা গাইবেন ২৮ থেকে ৩০টি গান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- টাকডুম টাকডুম বাজে, ওরে ভীষণ দরিয়ার ঢেউ, সব ভুলে যাই তাও ভুলি না ইত্যাদি।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. নওয়াজেশ আহমেদ রমনা পার্কের ওই বটমূলটি প্রথম খুঁজে বের করেন ১৯৬৭ সালে। এই সঙ্গীতানুরাগী ছায়ানটকে প্রস্তাব দেন যে, মুক্ত খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির মাঝে শান্তির বার্তা নিয়ে এ বটমূলে হতে পারে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।
সেই থেকে রমনা বটমূলেই হচ্ছে বাংলা বর্ষবরণের বার্ষিক প্রধান আয়োজনটি। কেবল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কারণে বন্ধ ছিল।
ছায়ানটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রমনার আয়োজন নিয়ে এখন দিনভর ব্যস্ত থাকছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চলছে নানা নির্দেশনায় কঠোর অনুশীলন ও রেওয়াজ।
ছায়ানটের সহ সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবারের বর্ষবরণের গুরুত্ব আমাদের কাছে বেশি। কেননা, এটি ৫০তম আয়োজন। আমরা চেয়েছিলাম, প্রথম দিককার শিল্পীদের সকলকে নিয়ে আয়োজন সাজাতে। কিন্তু সবাইকে না পাওয়ায় সম্ভব হয়নি’।
তিনি বলেন, ‘এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে মানবতা। তবে আয়োজনে থাকবে মানবতার পাশাপাশি আনন্দ আর কালজয়ী গানও। সারা বিশ্বে যে অস্থিরতা চলছে, আমরা তা মোচনে মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে শান্তি নেমে আসার আহ্বানে করবো এবারের আয়োজন’।
‘বর্ষবরণে বিশ্বের কোনো জাতিই এতো বড় আয়োজন করে না। তাই এটি বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ। এতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিমনারা নিজ উদ্যোগেই অংশ নেন। আগে আমরাও অনেককে আমন্ত্রণ জানাতাম। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্ন ও ভিসা জটিলতায় এখন আর বাইরের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। তবে আকাশ সংস্কৃতির যুগে অনুষ্ঠানটি বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছাতে সমস্যাও হয় না’।
‘এ আয়োজনটি যেহেতু অনেক বড়, তাই নিরাপত্তার প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকারও সহায়তা দিচ্ছে। তাই নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না’- বলেন খায়রুল আনাম শাকিল।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
ইইউডি/এএসআর