বুধবার (১২ এপ্রিল) রাত ১০টায় ওই কারাগারের ফাঁসির মঞ্চে রিপনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছেন জেল সুপার ছগির মিয়া।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন জঙ্গির একজন রিপন।
জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কোনাগাঁও গ্রামের আ. ইউসুফের ছেলে। ময়না তদন্ত শেষে তার মরদেহ ওই গ্রামে নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জেল সুপার ছগির মিয়া জানান, ফাঁসির আগে পরিবারের সকলকে দেখার শেষ ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপন। এ কারণে তৃতীয়বারের মতো পরিবারের ২৫ সদস্যকে কারাগারে ডেকে এনে তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করানো হয়।
সন্ধ্যা ৭টা থেকে আটটা ২৬ মিনিট পর্যন্ত তৃতীয়বারের মতো শেষ সাক্ষাৎ করে যান তার ওই ২৫ স্বজন।
ফাঁসি কার্যকরের আগে সন্ধ্যা ৬টায় পরিবারের আনা খাবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খাওয়ানো হয় রিপনকে।
জীবনের শেষ খাবার হিসেবে রাত ৮টায় কারাগার থেকে দেওয়া ভাত, মোরগের মাংস-মাছ ও সবজি দিয়ে রাতের খাবার খান রিপন।
এরপর রাত সোয়া ৯টার দিকে রিপনকে তওবা পড়ান শাহ আবু তুরাব জামে মসজিদের ইমাম হযরত মাওলানা মুফতি মো. বেলাল উদ্দিন। জেল সুপার ছগির মিয়া ও জেলার আবু সায়েম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাত ১০টায় ফাঁসি কার্যকরের সময় ফাঁসিকাষ্ঠের লিভার টানেন প্রধান জল্লাদ ফারুক হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরও চার জল্লাদ জাহাঙ্গীর, জলিল, লাল মিয়া ও আলফু। জল্লাদ ফারুক ৮৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আর অন্যরা প্রত্যেকে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। তাদের সহযোগী হিসেবে নতুন আরও ৬ জনকে দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান জেল সুপার।
ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার,পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাফায়াত মোহা. সাহেদুল করিম,পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধি এবং সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক ড. কমল রতন সাহা। এছাড়া কারাগারের ভেতরে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল ইসলাম ও হোসাইন মোহাম্মাদ হাই জকি।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন।
মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৫ আসামির মধ্যে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ এ রায় বহাল রাখার পর গত ২৭ মার্চ পৃথকভাবে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপন স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন। গত ০৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়ার পর জেলকোড অনুসারে তিন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করে স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
এনইউ/এএসআর