ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘মুফতি’ হান্নান-বিপুলের ফাঁসি কার্যকর

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
‘মুফতি’ হান্নান-বিপুলের ফাঁসি কার্যকর  ফাঁসি কার্যকরের বিফ্র করছেন সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান-ভিডিও

গাজীপুর: নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষনেতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ‘মুফতি’ আব্দুল হান্নান ও জঙ্গি শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয় বলে জানিয়েছেন সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান।

ফাঁসি কার্যকরের বিফ্র করছেন সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান/ছবি: দীপু মালাকার
বুধবার (১২ এপ্রিল) রাত ১০টায় ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে জানিয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালে হত্যা চেষ্টার দায়ে আদালতের রায় অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

বুধবার (১২ এপ্রিল) রাত ১০টায় ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে জানিয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালে হত্যা চেষ্টার দায়ে আদালতের রায় অনুসারে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

তাদেরকে এ কারাগারের একই ফাঁসির মঞ্চে পাশাপাশি দু’টি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে মৃত্যুদণ্ড তিন জঙ্গির অন্যজন জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে একই সময়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে।

ময়না তদন্ত শেষে কারাগার থেকে বের করে ‘মুফতি’ হান্নানের মরদেহ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরন গ্রামে ও বিপুলের মরদেহ চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের ‘বকশি পাটওয়ারী বাড়ি’তে  নিয়ে স্ব স্ব গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন-অর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, গোপালগঞ্জ ও চাঁদপুরে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

ফাঁসির মঞ্চের সামনে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরে উপস্থিত ছিলেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি ‍প্রিজন) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, ঢাকা বিভাগের ডিআইজি ‍প্রিজন মো. তৌহিদুল ইসলাম, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান ও ডেপুটি জেলার মনিরুল ইসলাম।    
 
ছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, পুলিশ সুপার হারুন-অর রশিদ, সিভিল সার্জন সৈয়দ মো. মনজুরুল হক এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলামও।

ফাঁসির মঞ্চকে ঘিরে ছিলেন ২০ জন কারারক্ষী।

মঞ্চে থেকে ফাঁসি কার্যকর করেন ৮ জন জল্লাদ। প্রধান জল্লাদ রাজুর নেতৃত্বে অন্য ৭ জল্লাদ হলেন- জল্লাদ হায়দার, জল্লাদ সালাউদ্দিন, জল্লাদ রুমান, জল্লাদ ওয়াসিম, জল্লাদ ইকবাল, জল্লাদ হাবিব মুন্সী ও জল্লাদ সাকু ব্যাপারি।

রাতের খাবার শেষে কারাগারের ইমাম ফাঁসির আসামিদের মঞ্চে নেওয়ার আগে তওবা পাঠ করান।

এরপর তাদের ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে একজন জল্লাদ কালো টুপি পরান। অন্য দু’জন জল্লাদ তাদের হাত ও পা বেঁধে দেন। আর কর্মকর্তাদের সংকেত পাওয়ার পর প্রধান জল্লাদরা মঞ্চের দুই পাশে দুই ফাঁসিকাষ্ঠের লিভার টেনে ফাঁসি কার্যকরে সহায়তা করেন।

এর আগেই আসামিদের শেষ ইচ্ছেও জেনে নেন কারা কর্তৃপক্ষ। তবে ‘মুফতি‘ হান্নানের সঙ্গে দু’দফায় তার স্বজনেরা শেষ দেখা করলেও শেষ পর্যন্ত বিপুলের স্বজনেরা কারাগারে আসেননি।
 
ফাঁসির পরে মরদেহ বহনে সন্ধ্যা থেকেই কারাগারের ভেতরে প্রস্তুত ছিল সাদা রঙের দু’টি অ্যাম্বুলেন্স। আর দুপুর থেকেই কারাগার ও আশপাশের এলাকাগুলোকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়।

কারাগারের মূল গেটে বেশ কয়েকজন এপিবিএন সদস্য কড়া পাহারায় ছিলেন। সেখান থেকে শুরু করে বেঙ্গা মার্কেট পর্যন্ত ৫০০ গজ এলাকায় মোতায়েন ছিলেন পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, এপিবিএন সদস্য ছাড়াও কমিউনিটি পুলিশিং সদস্যরা।

বেঙ্গা মার্কেট পর্যন্ত তিনটি প্রতিরোধক (ব্লক) স্থাপন করে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়। আর পুরো কারাগার প্রাঙ্গনের সব দোকানপাট বন্ধ রেখে সাধারণ মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

গাজীপুরের এসপি হারুন-অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এর আগে ‘মুফতি’ হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তাই পুরো গাজীপুরে আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি। কারাগার এলাকায় বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফাঁসি কার্যকর হলে আমরা কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দু’জনের (হান্নান ও বিপুল) মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেবো’।

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন।

মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৫ আসামির মধ্যে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ এ রায় বহাল রাখার পর গত ২৭ মার্চ পৃথকভাবে ‘মুফতি’ হান্নান, বিপুল ও রিপন স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন। গত ০৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়ার পর জেলকোড অনুসারে তিন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করে স্ব স্ব কারা কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
এমএন/পিএম/এজেডএস/এসজে/আরএস/এএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।