ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ার গাঁও-গেরামে পানি নিয়ে অশেষ দুর্ভোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
বগুড়ার গাঁও-গেরামে পানি নিয়ে অশেষ দুর্ভোগ পানি নিয়ে দুর্ভোগ- ছবি: আরিফ জাহান-বাংলানিউজ

বগুড়ার গাঁও গ্রাম ঘুরে: সবার কাঁধে বাঁশের ভাড়। শিকায় ঝুলছে সীসার পাতিল। কারো হাতে বালতি। বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে ছুটছেন তারা বাড়িরপানে। তবে এখানেও রয়েছে জ্বালা। বিদ্যুৎ চলে গেলে শুরু হয় দীর্ঘ অপেক্ষার পালা।

কারণ নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্ত পানিস্তর। নলকূপের হাতল চাপতে চাপতে অবশ হয়ে আসতে চায় হাত।

তাও পানি বের হতে চায় না। ঘরে খাবার পানি নেই। নেই ডুব-গোসলের পানি। সঠিক সময়ে রান্নাবান্নার কাজ করা হয়ে ওঠে না পানির অভাবে।
 
তাই পানির জন্য কাকডাকা সকালে ছুটতে হয় গাঁও-গেরামের মানুষদের। দুপুর ও বিকেলেও একই কাজ করতে হয় তাদের। সংসারের প্রয়োজনে পানির জন্য ছুটতে হয় অনেক আঁকা-বাঁকা পথ। পাড়ি দিতে হয় জমির আইল। এভাবে কষ্টকর উপায়ে পানি সংগ্রহ করে চরম দুর্ভোগে জীবন চালাচ্ছেন গ্রামের মানুষ।
পানি নিয়ে দুর্ভোগ- ছবি: আরিফ জাহান-বাংলানিউজবগুড়ার ১২টি উপজেলার মধ্যে ৯টিতেই প্রত্যেক বছর জানুযায়ি মাস থেকে খাবার পানির সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত শেরপুর, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া ও  কাহালু অন্যতম।
 
এছাড়া আদমদীঘি, শিবগঞ্জ, গাবতলী ও সদর উপজেলা। বাকি ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় এ সময়টায় খাবার পানির খুব একটা সঙ্কট দেখা দেয় না। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপতরের কার্যালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়।
 
টিনের ঘেরা ও ছাউনি বিশিষ্ট একটি ঘর। ঘরে ভেতর বসানো হয়েছে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ। চলতি মৌসুমে বোরোর জমিতে সেচ দিতে দিনরাতের নির্দিষ্ট সময় এই নলকূপ চালানো হয়। দল বেঁধে পালা করে মানুষ সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করেন। ডুব-গোসল দেন। কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করেন। থালা বাসন ধোয়ার কাজ সারেন।
 
বোরোর জমিতে সেচ দিতে এরকম অংসখ্য নলকূপ বসানো হয়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এসব নলকূপ থেকে গাঁও গেরামের মানুষ সাংসারিক প্রয়োজনে পানি সংগ্রহ করে থাকেন নিয়মিত।
পানি নিয়ে দুর্ভোগ- ছবি: আরিফ জাহান-বাংলানিউজআসলাম হোসেন, ওমর আলী, নাসিমা, নূরজাহান, নার্গিসসহ একাধিক ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে জানান, গ্রামের লোকজন বোরো প্রকল্পের নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে দুই তিন দিন ধরে সংরক্ষণ করেন। ওই পানি খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন তারা।
 
পানি সঙ্কটের কারণে গরু, মহিষ, মানুষকে একই ডোবা বা পুকুরে বাধ্য হয়ে গোসলের কাজ সারত হচ্ছে। এতে করে নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ।
 
এসব ভুক্তভোগীরা আরো জানান, পানি সমস্যার কারণে প্রত্যেক বছরের এসময়ে স্বজনদের বাসাবাড়িতে নিয়ে আসা যায় না। নিমন্ত্রণ করা যায় না জামাই-বেটিদের। কেননা পানীয় জলের প্রকট সমস্যায় ঠিকমত তাদের আপ্যায়নও করা যায় না যোগ করেন তারা।
 
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, পানির সমস্যা দূর করতে  জেলায় ২ লাখের মত ভার্টিকেল নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। অন্যসব নলকূপ পরিবর্তন করে সেগুলোকেও ভার্টিকেল নলকূপে রূপান্তর করা হয়েছে।
পানি নিয়ে দুর্ভোগ- ছবি: আরিফ জাহান-বাংলানিউজএছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসংখ্য মানুষ বৈদ্যুতিক সাব মার্সিবল মোটর স্থাপন করেছে। সবমিলিয়ে বিগত সময়ের মত এ জেলায় খাবার পানির সঙ্কট নেই বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।    
 
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমস্যাটি সমাধানকল্পে আপতত কোন উপায় দেখছি না। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতই শুধু এ সমস্যার সমাধান দিতে পারে। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। বাঁধ দিয়ে জলাধার গড়ে তুলতে হবে।

এভাবে বছরের এই সময়টিতে অনেকটা পানিসঙ্কট দূর করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুজ্জামান।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।