ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বাঙালি উৎসবমুখর জাতি, জানছে বিশ্ব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
বাঙালি উৎসবমুখর জাতি, জানছে বিশ্ব সাক্ষাতকারে কথা বলছেন মনজুর হোসেন, ছবি তুলেছেন কাশেম হারুন

ঢাকা: সংস্কৃতিই একটি জাতিকে পরিচিত করে, যা হারিয়ে গেলে টেকে না সে জাতি। যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহী নানান সংষ্কৃতি বহন করে চলেছে বাঙালি জাতি। এ সংস্কৃতি এখন ঐতিহ্যের পরিচিতি পেয়েছে সারাবিশ্বে। আর এবার বিশ্ববাসীর কাছে নতুন অলংকরণ হিসেবে পৌঁছাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা।

পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ বা অপরিমেয় সংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। গত বছরের ৩০ নভেম্বর ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় ইউনেস্কোর ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজের (আইসিএইচ) আন্তঃদেশীয় কমিটির একাদশ বৈঠকে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এই ঘোষণার পর বাংলাদেশ কীভাবে বিশ্বের দরবারে ফুটে উঠবে- তা নিয়ে নববর্ষের প্রাক্কালে নিজ দফতরে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর সচিব মো. মনজুর হোসেন।

অপরিমেয় সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপট নিয়ে বলুন...
ইউনেস্কোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার ও আইসিএইচ ট্যানজিবল বা ইনট্যানজিবল হেরিটেজের তালিকা করে থাকে। অপরিমেয় সাংষ্কৃতিক ঐহিত্যের অংশ হিসেবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই তালিকা করা হয়। সদস্য রাষ্ট্রদের সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য, যেমন আমাদের পুঁথির মতো পুরনো জিনিস বা কোনো কিছু তৈরির পদ্ধতির মতো বিষয়গুলো তারা তালিকাভুক্ত করে। এই তালিকায় বাংলাদেশের বর্তমানে তিনটি ঐতিহ্য রয়েছে। ২০০৮ সালে বাউল সংগীত, ২০১৩ সালে দ্য টেডিশনাল আর্ট অব উইভিং জামদানি (জামদানি বুনন শিল্প) এবং ২০১৬ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অপরিমেয় সংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেস্কো।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ষাটগম্বুজ মসজিদ এবং সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করেছে। মানবতার কল্যাণে কীভাবে কাজ করছে, সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তার প্রভাব কতটুকু- ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার বা আইসিএইচ এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে।
সাক্ষাতকারে কথা বলছেন মনজুর হোসেন, ছবি তুলেছেন কাশেম হারুন১৯৮৯ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্যারিসে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রস্তাব দিয়েছিল। কাজ করেছে বাংলা একাডেমি। পরবর্তীতে যখন চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় এলো, তখন জানতে চাওয়া হয়েছিল- কেন গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েছিল চারুকলা বিভাগ।

তাদের এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য কী?
তালিকাভুক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, এজন্য এই (মঙ্গল শোভাযাত্রা) সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সুবিধা হবে। সরকারি-বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিকভাবে এটার পরিচিতি পাওয়া যাবে। দেশের মধ্যে যেটা পরিচিত, সেটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দ্বিতীয় কারণ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটা নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
 
তিনি বলেন, হতে পারে যে, আমাদের যে সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য, তা বাইরের অনেকে জানেন না। আমরাও বাইরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য জানি না। তালিকাভুক্ত হওয়ায় দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্র উন্মোচিত হলো। কোরিয়ান ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর সঙ্গে ২০১৪ সালে যুক্তভাবে কাজ করেছিলাম, কীভাবে জামদানির বহুমাত্রিক ব্যবহার করা যায়? শাড়ির বাইরে এখন জামদানি ফেবরিক্স দিয়ে অনেক কিছু তৈরি হচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছিল জামদানিকে অপরিমেয় সাংস্কৃতি ঐতিহ্য ঘোষণা করায়।
 
বাংলাদেশ লাভবান কীভাবে?
হেরিটেজ ঘোষণার দুটো বিষয়, সংস্কৃতিক ঐহিত্য টিকিয়ে রাখা এবং বিশ্বের দরবারে পরিচিতি ঘটানো। আমরা লাভবান হবো এতো বড় মঙ্গল শোভাযাত্রা, জামদানি বুনন ও বাউল সংগীত আমাদের ঐতিহ্যের অংশ বলে। সেটা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি। কোনো জাতিই টিকে থাকবে না যদি না সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে না পারে। জাতি টিকে থাকে সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর ভর করে।
 
“আমাদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারছি, যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। আমরা যখন বোঝাতে পারবো, এটি সবার উৎসব তখন দিন দিন আমাদের মুখ আরও উজ্জ্বল হবে। সবচেয়ে বড় কথা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে পরিচিত করানো, যার আর্থিক মূল্য বিচার করা সম্ভব না। ”
 
মঙ্গল শোভাযাত্রা আগে কখনও চিন্তা করিনি, কিন্তু তারা (ইউনেস্কো) গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়েছে। তারা বিবেচনা করে প্রেক্ষাপট।

মঙ্গল শোভাযাত্রাকে আরও প্রচার করতে ইউনেস্কো কী ভূমিকা পালন করতে পারে?
এটা ঠিক তেমন না। ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের একটা অংশ। বিশ্ববাসী জানছে যে নববর্ষ তারা উৎসবের সঙ্গে পালন করে।
 
‘‘সুন্দরবন দেখতে বাংলাদেশে বিদেশিরা আসছেন। বিদেশিরা এসে জিজ্ঞাস করেন, তোমাদের ইতিহ্যের কী কী আছে? হেরিটেজের তালিকা দেখেই তারা আসেন। এটাতে আমরা লাভবান হচ্ছি। প্রচার করার জন্য অন্য দেশের সঙ্গে কাজ করতে গেলে ক্ষেত্র খুলে হচ্ছে। ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার জন্য ইউনেস্কো সহযোগিতা অবশ্যই দেবে। কখনও হুমকির মুখে পড়লে আমরাও চাইবো সহযোগিতা।
 
আর কী কী এই তালিকাভুক্ত হতে পারে?
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যাত্রা শিল্প নিয়ে কাজ করছে, ২০১৫ সালে জমা দেওয়া হয়েছিল শিল্পকলা একাডেমি থেকে। রিকশা পেইন্টিং- পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না। শীতল পার্টি, নকশী কাঁথা, গম্ভীরা-ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়া গানও ছিল। সংষ্কৃতি মন্ত্রণালয় তালিকা তৈরি করেছে। সদস্য দেশগুলো থেকে বছরে একটার বেশি স্বীকৃতি নয়, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
এমআইএইচ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।