ত্রিপুরাদের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব বৈসুক কেন্দ্র করেই এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাড়ায় পাড়ায় চলছে ঐতিহ্যবাহী গরয়া নৃত্য।
বৈসুক শুরু হয় বর্ষবরণের আগের দিন থেকে।
![ত্রিপুরাদের গরয়া নৃত্য/ছবি: বাংলানিউজ](http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/khagrachari-pic-220170413132823.jpg)
জানা যায়, নৃত্যের উল্লেখযোগ্য অন্তত ২২টি মুদ্রার মধ্যে চাংখা কানাই, খলাপালনাই, মাইকিসিল নাই, তাকরু তাই নাই, তুলা কানাই, খুল খুক নাই, রিসু নাই, মাতাই খুলুমনাই প্রভৃতি পরিবেশন করা হয়। মেয়েরা রিনাই রিচাই, গলায় মুদ্রার মালা এবং ছেলেরা ধুতি মাথায় গামছা বাঁধেন।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরা বলেন, ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে কুকি রাজের সঙ্গে ত্রিপুরা মহারাজা ধন্য মানিকের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কুকি রাজ পরাজিত হন। যুদ্ধকালীন সময়টি ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। তখন কুকিরা আড়ম্বর করে গরয়া উৎসব করে। গরয়া হলো প্রেমের দেবতা, দুঃখ দুর্দশা দূর করে কল্যাণ ও মঙ্গল বয়ে আনে। প্রকারান্তরে তিনি মহাদেব।
এদিকে ত্রিপুরা রাজাও মহাদেবের ভক্ত ছিলেন। তখন তিনি কুকিরাজকে যুদ্ধে পরাজিত করে তার কাছ থেকে গরয়া দেবতা এনে ত্রিপুরা রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেদিন থেকে তার রাজ্যে এ গরয়া দেবতার পূজা উৎসব এবং নৃত্য উৎসব প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে গরয়া নৃত্য পরিবেশিত হয়ে আসছে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মথুরা ত্রিপুরা বলেন, মূলত গ্রামবাসীর কল্যাণ ও মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যেই হাজার বছর ধরে ত্রিপুরা সমাজে বিশেষ এ নৃত্যের মাধ্যমে গরয়া দেবতার পূজা-অর্চনা হয়ে আসছে। আর গরিব-ধনী সব ত্রিপুরাই যেন এ পূজা করা থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্যই ঘরে ঘরে গিয়ে গরয়া করা হয়।
তিন পার্বত্য জেলার ত্রিপুরাদের গরয়া নৃত্যের ধরনে কিছুটা বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। তবে ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক প্রথা ও উৎসবের আমেজের মিল অভিন্ন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
এএ