ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ত্রিপুরা গরয়া নৃত্যে পাহাড়ের বৈসুক

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
ত্রিপুরা গরয়া নৃত্যে পাহাড়ের বৈসুক ত্রিপুরাদের গরয়া নৃত্য/ছবি: বাংলানিউজ

খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব বৈসাবি (বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিজু)। পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম ত্রিপুরা। ত্রিপুরারা বর্ষবরণ উদযাপন করে বৈসুক উৎসবের মধ্যদিয়ে। এ উৎসবের অংশ কয়েকশ বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গরয়া নৃত্য।

ত্রিপুরাদের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব বৈসুক কেন্দ্র করেই এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাড়ায় পাড়ায় চলছে ঐতিহ্যবাহী গরয়া নৃত্য।

বৈসুক শুরু হয় বর্ষবরণের আগের দিন থেকে।

আর শুরুর এক সপ্তাহ আগেই সাধারণত গরয়া নৃত্যের দল বেরিয়ে পড়ে পাহাড়ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। গরয়া নৃত্য ত্রিপুরাদের জনজীবনে বিজয় স্মারক হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়।

ত্রিপুরাদের গরয়া নৃত্য/ছবি: বাংলানিউজবৈসুকের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে কমপক্ষে ১৬ জন ত্রিপুরা নারী-পুরুষের দল বেরিয়ে পড়েন পাহাড়ি পল্লীতে। প্রতিটি ঘরের উঠোনে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের গরয়া নৃত্য পরিবেশন করেন। শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বয়সী একজনের কাঁধে থাকে শুল। পতাকার মতো করে শুলে বাঁধা থাকে একটি খাদি। শুলটি যে ঘরের আঙিনায় বসানো হবে, সেখানেই চলে বিচিত্র ও আনন্দঘন পরিবেশে নৃত্য।

জানা যায়, নৃত্যের উল্লেখযোগ্য অন্তত ২২টি মুদ্রার মধ্যে চাংখা কানাই, খলাপালনাই, মাইকিসিল নাই, তাকরু তাই নাই, তুলা কানাই, খুল খুক নাই, রিসু নাই, মাতাই খুলুমনাই প্রভৃতি পরিবেশন করা হয়। মেয়েরা রিনাই রিচাই, গলায় মুদ্রার মালা এবং ছেলেরা ধুতি মাথায় গামছা বাঁধেন।

ত্রিপুরাদের গরয়া নৃত্য/ছবি: বাংলানিউজবাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরা বলেন, ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে কুকি রাজের সঙ্গে ত্রিপুরা মহারাজা ধন্য মানিকের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কুকি রাজ পরাজিত হন। যুদ্ধকালীন সময়টি ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। তখন কুকিরা আড়ম্বর করে গরয়া উৎসব করে। গরয়া হলো প্রেমের দেবতা, দুঃখ দুর্দশা দূর করে কল্যাণ ও মঙ্গল বয়ে আনে। প্রকারান্তরে তিনি মহাদেব।

এদিকে ত্রিপুরা রাজাও মহাদেবের ভক্ত ছিলেন। তখন তিনি কুকিরাজকে যুদ্ধে পরাজিত করে তার কাছ থেকে গরয়া দেবতা এনে ত্রিপুরা রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেদিন থেকে তার রাজ্যে এ গরয়া দেবতার পূজা উৎসব এবং নৃত্য উৎসব প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে গরয়া নৃত্য পরিবেশিত হয়ে আসছে।

ত্রিপুরাদের গরয়া নৃত্য/ছবি: বাংলানিউজসাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মথুরা ত্রিপুরা বলেন, মূলত গ্রামবাসীর কল্যাণ ও মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যেই হাজার বছর ধরে ত্রিপুরা সমাজে বিশেষ এ নৃত্যের মাধ্যমে গরয়া দেবতার পূজা-অর্চনা হয়ে আসছে। আর গরিব-ধনী সব ত্রিপুরাই যেন এ পূজা করা থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্যই ঘরে ঘরে গিয়ে গরয়া করা হয়।  

তিন পার্বত্য জেলার ত্রিপুরাদের গরয়া নৃত্যের ধরনে কিছুটা বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। তবে ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক প্রথা ও উৎসবের আমেজের মিল অভিন্ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।