ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

গুডবাই বলে মুক্তাগাছায় ফেরা হলো না সিফাতের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
গুডবাই বলে মুক্তাগাছায় ফেরা হলো না সিফাতের মো. সিফাতের শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস

সাভার (ঢাকা): পূরণ করা হলো না মা-বাবার ইচ্ছা। ধরা হলো না পরিবারের হাল। জীবনের সকল চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ রেখেই মো. সিফাতকে (২৩) চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে।

সিফাত সাভারের সিটি ইউনির্ভাসিটির টেক্সটাইল বিভাগের ২৫তম ব্যাচের ১১তম সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা আব্বাসিয়া মাদ্রাসা শিক্ষক মাহফুজুর রহমানের একমাত্র ছেলে।

অনেক স্বপ্ন ছিলো তাদের এ নয়নের মনিকে নিয়ে। সবকিছুই সুন্দর মতোই চলছিলো। আর মাত্র চারমাস পর তার বের হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই সব কিছু ছেড়ে বিদায় নিতে হলো তাকে।
অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বন্ধু সিফাতের স্বজনেরা
সিফাতের পরিবার কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার এই অকাল চলে যাওয়াকে। বার বার প্রলাপ বকতে বকতে মূর্ছা যাচ্ছে তার স্বজনেরা। এ যেন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। সবার শুধু একটাই প্রশ্ন কি দোষ ছিলো সিফাতের? কেনো সিফাতকে এভাবে জীবন দিতে হলো? কে নেবে এর দায়ভার?

চলতি মাসের ০১ এপ্রিল মুক্তাগাছা থেকে আসেন ক্যম্পাসে। তার শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস ‘Good bye Muk’ শেষ বিদায় জানায় তার জন্মস্থল মুক্তাগাছাকে। এরপর আর আসেনি ফেসবুকে। নেই কোনো স্ট্যাটাস। আজকাল যেখানে মানুষ ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফেসবুকে ঢু- না মারলে পেটের ভাত হজম হয় না। সেখানে তার ফেসবুকের অনিয়মিত উপস্থিতি যেন অনেক কিছু বলে দেয়।
অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বন্ধু সিফাতের স্বজনেরা
সিফাতের স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, এলাকার সাধারণ জনগণ কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছে না এই মৃত্যুকে। ছিল না বাজে কোন আড্ডা। সব সময় চেষ্টা করতো ঝামেলা এড়িয়ে চলতে। কিন্তু ঘাতকের বুলেট যেন তাকেই খুঁজে ফিরছিল।

সহপাঠীরা অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বন্ধু সাদিউল (অভি), তানভির, ফারাবিসহ অসংখ্য শুভনুধ্যায়ীরা বলেন, লেখাপড়া শিখে একটা প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার ইচ্ছা ছিল তার। বাবা-মাকে তাদের কষ্টের ফল দিতে চেয়েছিল। সবই আজ ব্যর্থ। নিভে গেলো বংশের একমাত্র বাতি। কারণ, সিফাতের আর কোনো ভাই-বোন যে নাই। এলাকায় অত্যান্ত ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছেলে বলে পরিচিত ছিলো। তাকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য শত শত মানুষ জড়ো হতে থাকে তার বাড়িতে। হাতে হাত রেখে করতে থাকে মানববন্ধন কর্মসূচি।
অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বন্ধু সিফাতের স্বজনেরা
গত ১০ এপ্রিল (রোববার) দুপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাপ্পির নেতৃত্বে কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী বিশ্বাবিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুপুরের খাবার খেয়ে যাওয়ার সময় ওই সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন সিফাত ও বাসুদেব নামের দুই শিক্ষার্থী। পরে তাদের সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিফাতকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এছাড়া ওই রাতেই পুলিশ হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বাপ্পিসহ মোট চারজনকে আটক করেছে।

এভাবে আর কতো সিফাতকে অকালে জীবন দিতে হবে? আর কতো বাবা-মা হারাবে তাদের আদরের সন্তানকে? সিফাত হত্যার যথাযথ বিচারের দাবি করছেন সন্তানহারা স্বজনেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
জিপি/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।