ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

দেশে দেশে পহেলা বৈশাখ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
দেশে দেশে পহেলা বৈশাখ বিভিন্ন দেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রতীকী চিত্র

ঢাকা: পহেলা বৈশাখ। বাংলা সনের প্রথম দিন তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাঙালি সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সব চেয়ে বড় অনুষঙ্গ। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে পালন করা হয়।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও নববর্ষ হিসেবে পালন হয় পহেলা বৈশাখ। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিরাও নিজ নিজ কমিউনিটিতে পালন করে পহেলা বৈশাখ।

সে হিসেবে পহেলা বৈশাখ হচ্ছে বাঙালিদের সার্বজনিন লোকউৎসব।
 
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে এপ্রিল মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখে পহেলা বৈশাখ পালন হয়। আধুনিক ও প্রাচীন-সব পঞ্জিকাতেই এর মিল রয়েছে। তবে বাংলা একাডেমি প্রণীত বর্ষপঞ্জিতে ১৪ এপ্রিলকে পহেলা বৈশাখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ীই বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ পালন হয়ে আসছে দীর্ঘকাল ধরে।
 
নববর্ষে ঢাকায় বৈশাখী উৎসবের আবশ্যিক অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখ সকালে এই শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ফের চারুকলায় গিয়ে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন ও আবহকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়।
 
শোভাযাত্রায় বহনের জন্য বানানো হয় বিভিন্ন রংয়ের মুখোশ ও নানা প্রজাতির প্রাণির প্রতিকৃতি। এতে নানা শ্রেণি পেশার হাজার হাজার লোক অংশ নেয়। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ।  ফাইল ফটো
 
ঢাকার পহেলা বৈশাখের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে নতুন বছরের নতুন সূযর্কে আহ্বান জানায়, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো। ১৯৬০ দশকে পাকিস্তান গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানট এ অনুষ্ঠান পালন করে আসছে।
 
বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও মহাসমারোহে পালন হয় পহেলা বৈশাখ। বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে নানা অনুষ্ঠান পালন হয় সমগ্র পশ্চিবঙ্গে। বাংলার গ্রামীণ ও নাগরিক জীবনের মেলবন্ধন সাধিত হয় পহেলা বৈশাখে।
 
সাংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন চর্চার পীঠস্থান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ও কোলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে বিশেষভাবে পালিত হয় পহেলা বৈশাখ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠান দু’টিতে নামে বাঙালির ঢল।
 
শুধু বাংলাদেশ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নয়; এই মধ্য এপ্রিলে পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে চলে এ উৎসব। ভৌগোলিক অবস্থান, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, যোগাযোগ, চেতনাগত মিল, সংস্কৃতির আদান-প্রদান, পযর্টন, ব্যবসা, বাণিজ্য, লেনদেন ও ধর্মীয় মেলবন্ধনের কারণে এ অঞ্চলে মিলে গেছে নববর্ষ পালনের অভিন্ন ধারা।
 
পযর্টন দেশ থাইল্যান্ডেও পালিত হয় পহেলা বৈশাখ। এপ্রিলের ১৪ ও ১৫ তারিখ নিজস্ব রীতিতে তারা পহেলা বৈশাখ পালন করে। তাদের এই উৎসবের নাম "সঙ্ক্রান"। এদিন তারা রং-হীন "হোলী"- মানে শুধু পানি ছিটিয়ে এই উৎসব পালন করে। থাইল্যান্ডে পহেলা বৈশাখ।  ছবি: জাহিদুর রহমান
 
"সঙ্ক্রান" শব্দটি বাঙালিরও পরিচিত। কারন  এই "সঙ্ক্রান"- শব্দটি আসলে "সংক্রান্তি"। ‘সঙ্ক্রান’ পালনের রীতির সঙ্গে বাংলাদেশের পাহাড়ি জনপদে পানির উৎসব’র মিল রয়েছে।
 
বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে জলীয় "সংক্রান্তি" উৎসবের উৎস বার্মায়।   মধ্য এপ্রিলে বার্মাতেও পহেলা বৈশাখ পলন করা হয় "থিংগ্যান" নামে।
 
একই উৎসব তামিলরা পালন করে "চিত্রাই" নামে। তবে এটা পুরোটাই মন্দির ভিত্তিক উৎসব। পাঞ্জাবি শিখরাও "বৈশাখী" (Vaisakhi)পালন করে।   প্রধানত অম্রিতসারের স্বর্ণমন্দিরে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে।
 
নেপালিদের ফুলেল নববর্ষ (Baisakh) উৎসবও আমাদের সাথেই পালন হয়। আসামিরা পালন করে "রঙ্গালি বিহু"। মনিপুরীরাও পালন করে তাদের নববর্ষ আমাদের সাথে পালন করে।   যাদের সংস্কৃতি উড়িষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃত।
 
শ্রীলঙ্কায় বৈশাখী উৎসব হয় "আলুথ আউরুদু" নামে। লাউসে ‘পি মাই লাও" নামে চলে বৈশাখী উৎসব এই মধ্য এপ্রিলেই। কম্বোডিয়ায় "চাউল চা থামে" আর চীনের উনান প্রদেশে "দাই" সম্প্রদায় বুদ্ধের উদ্দেশে পহেলা বৈশাখ পালন করে। হিমালয় কন্যা নেপালেও পহেলা
বৈশাখই বছরের প্রধান উৎসব।   এ দিন দেশটিতে সরকারি ছুটি থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৭
এজেড/জেডএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।