ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মন জয় করেছে লাঠি খেলা!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭
মন জয় করেছে লাঠি খেলা! খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নববর্ষের শোভাযাত্রায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিয়ালদের কসরত; ছবি-মানজারুল

খুলনা: খুলনায় পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ছন্দের তালে তালে লাঠির বিভিন্ন ধরনের কসরত দেখিয়ে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন লাঠিয়ালরা।

অবশ্য ঐতিহ্যবাহী এই জনপ্রিয় খেলাটি অনেকটা হারিয়েই যেতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে লাঠি খেলা নিছক একটি নাম মাত্র।

অনেকেরই হয়তো আগে কখনো এই খেলাটি দেখার সুযোগ হয়নি।

তবে তাদের অনেকেই এবার এই খেলা দেখলেন পহেলা বৈশাখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বর্ষবরণের আয়োজনে।

লাঠি খেলা এদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ভ্রাম্যমাণ পরিবেশনা শিল্প। আগের দিনে গ্রামের সাধারণ মানুষেরা তাদের নৈমিত্তিক জীবনের উৎসব-বাংলা বর্ষ বরণ, বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি অনুষ্ঠান উপলক্ষে লাঠি খেলার আয়োজন করে থাকতেন। যা এখন গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে।

নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খুবির এ আয়োজনে মুগ্ধ হয়েছেন বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশু, কিশোর। ভ্রাম্যমাণ এ খেলা দেখতে ছুটে আসেন তারা। লাঠি খেলা বেশ আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে তাদের।

খুলনা মহানগরীর রয়্যাল চত্বরে বাদ্যের তালে তালে যখন দুই দল লাঠিয়ালের লাঠি খেলা চলে তখন এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয় সেখানে।

আব্দুল্লাহ নামের এক পথচারী লাঠি খেলার দৃশ্য দেখে বলেন, এক সময় বাংলাদেশের সর্বত্র এই লাঠি খেলা শিল্পের প্রচলন ছিল। বর্তমানে এটি কিছু অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ আয়োজন করায় নতুন প্রজন্ম লাঠি খেলা দেখতে পারছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ উদযাপনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

পহেলা বৈশাখ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান নগরীর শিববাড়ী মোড়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন। পরে উপাচার্যের নেতৃত্বে নগরীর শিববাড়ী মোড় থেকে ময়লাপোতা মোড় হয়ে রয়্যাল চত্বরে গিয়ে বাংলা নববর্ষের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষ হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে খুলনা নগরীতে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা; ছবি- মানজারুল শোভাযাত্রায় ট্রেজারার খান আতিয়ার রহমান, ডিনবৃন্দ, পরিচালক, রেজিস্ট্রার, ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্টবৃন্দ, মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি এবং কমিটির সদস্য-সচিব, বিভাগীয় প্রধানগণ, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন।

নানা রংয়ের ফেস্টুন, হাতি, ঘোড়া, কাকাতুয়াসহ বর্ণিল সাজের সাথে বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলাসহ শোভাযাত্রাটি যখন এভিনিউ পথে এগোচ্ছিলো তখন আশপাশের মানুষ হাত নেড়ে শোভাযাত্রাকে অভিনন্দন জানায়।

রয়্যাল মোড়ে উপাচার্য সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রাটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

তিনি সাফল্যের সাথে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি আয়োজন ও তাতে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনিস্টিটিউট, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, সকল শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, নিরাপত্তা শাখা, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের এ উৎসব আমাদের প্রাণের উৎসব। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অসম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে পহেলা বৈশাখের এই অনুষ্ঠানে। আমাদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কৃষ্টি বাংলা নববর্ষের মাধ্যমে প্রবাহমান।

এরই ধারাবাহিকতায় জীবনের আগামী দিনগুলো যাতে সুন্দর ও সাফল্যের সাথে অতিবাহিত হয় সেই আশা করেন তিনি।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্ব বেলা ২ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। মেলা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ফটক দিয়ে তরুণ তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭
এমআরএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।