ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

তদবিরবাজদের মাথায় হাত!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
তদবিরবাজদের মাথায় হাত! শাহ মিজান শাফিউর রহমান

ঢাকা: বেশ মন্দা সময় কাটলো তদবিরবাজদের। পাতি থেকে মাঝারি সারির নেতা। কি "হাইব্রিড, কি কাউয়া" বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। উসখুস করেও অর্থের বিনিময়ে এবার পুলিশে চাকরি দেবার ব্যবসাটা করা হলো না কারোরই।

অথচ অন্যান্য বছর এ দিনগুলোতে টাকা গুণতে গুণতে আঙুলের চামড়াই ক্ষয় হয়ে যেতো অনেকের। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে অনেকেই সঙ্গী নিয়ে সেরে ফেলতেন ব্যাংকক বা বালির ট্রিপ!

এবার পুরনো দিনের সুখের এসব কথা ভাবতে জিবেতে কামড়! আনন্দের স্মৃতি ঝাপসা করে দেয় বাস্তবতা।


এবারো ঘুরেফিরেই হতাশা আর বিরক্তি এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘিরে। যত গণ্ডগোল। সবকিছুর নেপথ্যেই এক পুলিশ কর্মকর্তার পদক্ষেপ।
 
সেই পুলিশ কর্মকর্তার নাম শাহ মিজান শাফিউর রহমান। ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি)। সাহস আর একাগ্রতা, এই দু’টোকে পুঁজি করে ঘুনে ধরা ব্যবস্থাকে যে বদলে দেয়া যায়। স্বচ্ছ আর নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটাই প্রমাণ করলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

শাহ মিজান শফিউর রহমানকোনো তদবির বা অর্থের খরচা ছাড়াই ঢাকা জেলায় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে নিয়োগ পেতে চলেছেন ৬৯৪ জন। দেশের বাস্তবতা আর চলমান প্রেক্ষাপটে এটা কি করে সম্ভব?

ইচ্ছে থাকলেই সম্ভব। আপনি নিজে সৎ হোন। দেখবেন সততার শক্তিই আলাদা। কোনো অনিয়ম বা ভয়ভীতি আপনাকে টলাতে পারবে না- বাংলানিউজকে এ কথাই বলছিলেন ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

গত ৮ এপ্রিল বাছাই ও ১০ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই এবার যারা পুলিশে যোগ দিচ্ছেন। তাদের সবাই ফ্রেস ব্লাড।

শাহ মিজান শাফিউর রহমানএরা যে নিজের মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশে যোগ দিচ্ছেন- সে কারণে পেশাগত জীবনে এদের সেবায় পাওয়া যাবে ভিন্নতা। এরা সচেতন থাকবে নিজের পেশার মর্যাদা নিয়ে। এভাবেই একদিন পাল্টে যাবে পুলিশ বাহিনীর চেহারা। পুলিশ হবে সত্যিকারের জনগণের বন্ধু- বলছিলেন শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

আগে নিয়োগ এলেই নড়েচড়ে বসতো সবাই। তিন থেকে আট লাখ টাকার বিনিময়েই মিলতো পুলিশে নিয়োগ। যার সাক্ষ্য দেয় পেছনের বছর।

২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে কেবল ঢাকার ধামরাই উপজেলাতেই ভুয়া বাসিন্দা সাজিয়ে এক হাজার লোককে নিয়োগ দেওয়া হয় কনস্টেবল পদে।

একদিকে দুর্নীতির অভিযোগ। অন্যদিকে কাগজে কলমে আর নানা কৌশলেও জায়েজ করে নেওয়া এসব নিয়োগ। এভাবেই চলেছে বছরের পর বছর।

যে প্রক্রিয়ায় হাত-বদল হয়েছে মোটা অংকের অর্থ। অর্থের বিনিময়ে ভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের কাছে জমি হস্তান্তর আর জমি বিক্রির নামে স্থায়ী বাসিন্দা সাজিয়ে নাটক। আবার চাকরি হবার পর সেই জমি ফেরতের মতো নানা ঘটনার সাক্ষি এই ঢাকা জেলা।

পুলিশ, আইনজীবী থেকে রাজনৈতিক নেতা। পাতি নেতা থেকে জনপ্রতিনিধি। এমনকি সাংসদপত্নীদের অনেকেই জড়িয়েছেন এ ব্যবসায়। তবে এবার এদের সবার মুখেই ছাই। সেটাই বা কি করে হলো সম্ভব?

গত বছর বাংলানিউজে "১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি!" এ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। সাধারণ মানুষের কাছে আমার মনোভাব পৌঁছে দেবার বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করেছে শিরোনামটি। মানুষ সেটা প্রথমে বিশ্বাস করেছে। পরে পরখ করে তার প্রমাণও পেয়েছে।

কোনো তদবিরের কাছেই আমরা মাথা নত করিনি। কে কার স্বজন। কে কোন দল করেন। কার পরিবারের কি প্রভাব প্রতিপত্তি। এগুলোর কোনটাই আমরা দেখিনি। দেখেছি কেবল প্রার্থীর যোগ্যতা। আর এভাবেই নিরপেক্ষ আর স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা প্রকৃত যোগ্য আর মেধাবীদের জায়গা করে দিতে পেরেছি এই বাহিনীতে- বলছিলেন শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

পুলিশের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা শাহ মিজান শাফিউর রহমানের। ২০০১ সালে পুলিশে যোগদান করে দিনাজপুর জেলা, সিএমপি, র‌্যাব, এসবি ও যশোর জেলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে দু'বার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘জাতিসংঘ শান্তি পদক’ প্রাপ্তি।

পুলিশ সুপার হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলায় সন্ত্রাস ও গডফাদার দমনে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার স্বাক্ষর রাখা শাহ মিজান শাফিউর রহমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগে উপ পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন শেষে এখন ঢাকার এসপি।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, তদবিরকে না বলেছি। তবে অন্যপথে কেউ যাতে পুলিশে ঢুকে পড়তে না পারে সে ব্যাপারেও ছিলো জেলা পুলিশের সুক্ষ্ম নজরদারি।

অর্থের বিনিময়ে প্রক্সি (একজনের হয়ে অন্যজনের পরীক্ষা দেয়া) দিতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলেই ধরা পড়েছেন। তাদের পরিস্থিতি দেখে হল ছেড়ে পালিয়েছেন সাতজন।

মহানগরসহ ঢাকা জেলায় ১০৪ নারীসহ ৬৯৬টি পদের বিপরীতে ৪৭০ জন এবার নিয়োগ পাচ্ছেন এ জেলায়।

মজার কথা, আমরা মহানগরী থেকেই অনেক যোগ্য ছেলেকে পেয়েছি। যার মধ্যে রয়েছে বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

তারাও কিন্তু পরখ করতে এসেছিলেন। নিশ্চিত হয়েছেন নিয়োগ প্রক্রিয়ার সত্যতা নিয়ে। এখন তাদের অনেকেই বলছেন, পুলিশ বাহিনীতে তারা যোগ দেবেন। পড়াশোনাও চালিয়ে যাবেন।

বিভাগীয় মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যত পুলিশ কর্মকর্তার স্বপ্নও দেখছেন অনেকে। আর এই পরিবর্তনের চেহারাটাই আমাদের ভাবমূর্তি উন্নয়নের সূচনা। নতুন দিনের স্বপ্ন। এমনটিই বলছিলেন শাহ মিজান শাফিউর রহমানের।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
জেডআর/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।