তবে হত্যার দায় অস্বীকার করেছেন নাগরী। আর নূরুল ইসলাম স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে স্ত্রী সুমী দাবি করলেও পুলিশ কর্মকর্তারা মোটামুটি নিশ্চিত যে এটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে রাজধানীর নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছি। তাদের দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি বলা যাবে না।
গত ১৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ নম্বর ডোম ইনো অ্যাপার্টমেন্টের শোয়ার ঘর থেকে নূরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের দুই-তৃতীয়াংশ খাটের নিচে এবং বাকিটা বাইরের দিকে ছিলো। তার মুখে রক্ত জমাট বাঁধা ছিলো। মরদেহের কিছুটা দূরেও রক্ত দেখা গেছে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, সাবেক কাস্টমস কমিশনার শাহাবুদ্দীন নাগরীর নারীপ্রীতির বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট ছিলো তার সহকর্মীদের মাঝে। অবসরের আগ পর্যন্ত মাঝে মধ্যেই সুন্দরীরা হাজির হতেন তার অফিসে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় এসব বিষয়ে কথা বলার সাহস করতেন না অধস্তনরা। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার কারণে তার পদোন্নতি আটকে ছিল দীর্ঘদিন। অবশেষে দুই বছর আগে কাস্টমস কমিশনার হিসেবেই তিনি অবসরে যান।
অন্যদিকে বাগেরহাটের রামপালের মেয়ে সুমী নূরুল ইসলামকে বিয়ের আগে বাবু নামের আরেকজনকে বিয়ে করেছিলেন। বনিবনা না হওয়ায় সেই ঘর টেকেনি। তবে ওই স্বামীর বিরুদ্ধে সুমী নারী নির্যাতনের মামলা করেছিলেন। আর নূরুল ইসলামের সঙ্গে সুমীর প্রথম পরিচয় হয় বাগেরহাটে, ছয়-সাত বছর আগে। এর বছরখানেক পর তারা বিয়ে করে ঢাকায় চলে আসেন।
সূত্র দাবি করেছে, ঢাকায় এসে সুমী প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। আর নূরুল ইসলাম তাতে সহায়তা করেন। বিভিন্ন ক্লাবে গিয়ে কায়দা করে সুমী বিত্তশালীদের সঙ্গে পরিচিত হতেন। পরে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এসব করতে গিয়েই এক সময় সুমীর পরিচয় হয় শাহীন নামের এক নারীর সঙ্গে। শাহীনও বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আর এই শাহীনের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ছিল শাহাবুদ্দীন নাগরীর। শাহীনই এক অনুষ্ঠানে নাগরীকে পরিচয় করিয়ে দেন সুমীর সঙ্গে। এরপর নাগরী ও সুমী দীর্ঘদিন যোগাযোগ রক্ষা করেন। একপর্যায়ে নাগরীর সিদ্ধান্তেই নূরুল ইসলামকে দিয়ে এলিফ্যান্ট রোডের ডম-ইনো ভবনের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন সুমী।
এদিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকা শাহাবুদ্দীন নাগরী শুরু থেকেই নূরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছেন। তবে নূরুল-সুমী দম্পতির সঙ্গে তার যোগাযোগ সম্পর্কিত নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। সেসব তথ্য পুলিশ এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছে না।
এমনকি নূরুল ইসলাম যেদিন মারা যান সেদিনও বেলা ৩টা ১৩ মিনিটে শাহাবুদ্দীন নাগরী এলিফ্যান্ট রোডের ওই বাসায় আসেন এবং সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে বেরিয়ে যান। যা ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়েছে।
পুলিশ সূত্রের দাবি, শাহাবুদ্দীন নাগরী একজন বহুগামী মানুষ। শুধু সুমী নয়, আরো অনেক নারীর সঙ্গেই তিনি সম্পর্ক রাখতেন। আর এসব করে তিনি লাখ লাখ টাকা ওড়াতেন। চাকরি জীবনে তিনি দুর্নীতি করে অনেক টাকা কামিয়েছেন বলেও সূত্রের দাবি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
জেডএস