বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে মাঝামাঝি সময় অথবা ওই মাসের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূলকাজ বা কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করার সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এ কাজের উদ্বোধনের সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আনতে চায় সরকার।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রী এ দু’জনের যে কোনো একজনের আসার বিষয়টি নিশ্চিত হলে এবং তাদের দেওয়া সময় অনুযায়ী উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে বলে সূত্রগুলো আরও জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেজ ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, সেপ্টেম্বরে কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন হবে বলে আশা করছি। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি চালানো হচ্ছে। আমরাতো মনে করি এ সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসলে ভাল হয়। তিনি না পারলে প্রধানমন্ত্রীর আসার বিষয়টিও আমরা বলছি। তবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যোগাযোগ করছে। তাদের আসার বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই নিশ্চিত করবে।
রাশিয়ার অর্থায়ন, তত্ত্বাবধান ও সার্বিক সহযোগিতায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির অধীনে এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় জনবল প্রশিক্ষণ রাশিয়া দেবে। ইতোমধ্যেই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে এবং তা এগিয়ে চলছে। মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে এবং এসব কাজ শেষ পর্যায়ে।
এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট চারটি ইউনিট হবে। প্রতিটি উউনিটে ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন হবে। তবে প্রথমে দু’টি ইউনিট নির্মাণ করা হবে। এ দু’টিতে মোট ২৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ভবিষ্যতে আর দু’টি ইউনিট করা যাবে এমন জায়গা প্রস্তত রাখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৮শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী করে এ প্রকল্পের এলাকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন এবং সুষ্ঠুভাবে ও নিরাপদে পরিচালনার জন্য আড়াই হাজারেরও বেশি জনবল প্রয়োজন হবে বলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের স্পেন্ট ফুয়েল (ব্যবহৃত জ্বালানি) ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া ইতোমধ্যেই রাশিয়া অনুমোদন ও অনুস্বাক্ষর দিয়েছেন। এ চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া পারমাণবিক বর্জ্য রূপপুর থেকে নিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে এ পারমাণবিক প্রকল্প পরামর্শক ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তিটির অধীনে বাংলাদেশ প্রয়োজন মনে করলে ভারতের কাছ থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ সেবা নিতে পারবে এবং ভারত উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে পারবে। এছাড়া ভারতের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কারিগরী প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে।
এ সব বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে আরও বলেন, সব কিছু ঠিকঠাকভাবেই এগিয়ে চলছে। অবকাঠামো নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। এ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা আজ অনেকেই ভাবতে পারছেন না। এটা একটা অনেক বড় কাজ। রাশিয়া এগিয়ে না এলে আমাদের পক্ষে এ কাজ হাতে নেওয়া সম্ভব ছিলো না। আর বঙ্গবন্ধুর কন্যার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কারণেই আজ রাশিয়া এগিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
এসকে/এসএইচ