একটি-দুটি বা সাত রঙ নয়, যেন হাজারো রঙের খেলা। সেই আলো ঢেউয়ে ঢেউয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে কিনারে।
রাজধানীর বুকে হাতিরঝিলে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে দেখা যায় এই আলোর ঝরকানি। বাড্ডা অংশে পুলিশ প্লাজার কাছে বিকেল থেকেই অপেক্ষা করছিলেন শত শত মানুষ। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা। সংখ্যা বেড়ে গেল আরও কয়েকগুণ। ব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে বা সড়কের পাশে বসে অন্ধকারের দিক মুখ করে বসে অপেক্ষা করছেন সবাই।
সন্ধ্যা ঠিক সাড়ে ৭টা। অন্ধকার অংশে প্রথমে চতুর্ভুজাকৃতি সামান্য সবুজ আলোর ছটা। সাউন্ড বক্সে হঠাৎ বেজে উঠলো সঙ্গীত। সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারের বুক চিরে আলার ঝলকানি। পানিতে বসানো সারি সারি ফোয়ারা, বের হচ্ছে পানি। সঙ্গে আলো-লাল, নীল, হলুদ; অর্থাৎ সাত রঙ।
ফোয়ারার পানি সোজা হয়ে, বাঁকা হয়ে; আবার কখনও হেলে দুলে পড়ছে একটি আরেকটির উপর। কখনও ফুলের আকৃতি, কখনও পাখি। আবার কখনও ঝরণারুপে আসছে দর্শকের চোখে। আর উপর থেকে আলোর রশ্মি সেই রঙিন ফোয়ারার পানিকে করছে মনোমুগ্ধকর-আকর্ষণীয়।
টানা ১৫ মিনিট ধরে চললো আলোর খেলা। দর্শক মাতানো সঙ্গীতও বাজছিল জোরেসোরে। ঝিলের পানিতে ওয়াটার ট্যাক্সি চলছে, তাতেও ঝিকিমিকি আলো। ফোয়ারার সঙ্গে মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য ধরে রাখতে মোবাইলে ভিডিও-ছবি তুলছেন প্রায় সবাই।
হাতিরঝিলে ‘অ্যাম্পিথিয়েটার এবং মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইন’ থেকে আলোর এই খেলা উপভোগ করছেন রাজধানীবাসী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলা বৈশাখের আগের দিন ‘হাতিরঝিল মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইন’ প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর প্রতি সন্ধ্যায় সংগীতের তালে বর্ণিল আলোর খেলা দেখতে আসছেন হাজারো মানুষ। জলের নাচনের সঙ্গে রঙিন আলো দেখা যাচ্ছে গুলশান, পুলিশ প্লাজা, মেরুল বাড্ডা, মধুবাগ ও মহানগর প্রজেক্ট এলাকা থেকে।
প্রতিদিন অফিস শেষে হাতিরঝিল হয়ে তেজগাঁওয়ের অফিস থেকে বাড্ডার বাসায় ফেরেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত সোহেল রানা। তিনি বলেন, প্রতিদিনই আসি। এই আলোর খেলা দেখলে মন জুড়ায়। বাংলাদেশে এমন ফোয়ারা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার!
১ হাজার ৯৮০ বর্গমিটারের এ রঙিন ফোয়ারাটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় রঙিন ফোয়ারা বলে দাবি নির্মাতাদের। ফোয়ারার পানি উপরে উঠছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ মিটার।
প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা এবং সাড়ে ৯টায় ১৫ মিনিট করে দেখা যায় জল ও আলোর খেলা। খোলা আকাশের নিচে নিরিবিলি আর শীতল পরিবেশে বাড়তি প্রশান্তি পাচ্ছেন নগরবাসী।
হাতিরঝিলের গুলশান আড়ং ও পুলিশ প্লাজার মাঝামাঝি অংশে গোলাকার উন্মুক্ত একটি মঞ্চও তৈরি করা হয়েছে। চালু হলে এখানে একসঙ্গে ২ হাজার মানুষ বসে অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি ফোয়ারা দেখকে পাবেন।
সেনাবিহিনীর স্পেশাল ওয়াকার্স অর্গানাইজেশন (এসডিব্লও ও-পশ্চিম) গণপূর্ত অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ (রাজউক) এবং ঢাকা ওয়াসা’র সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয়েছে এ দুটি স্থাপনা।
নগরবাসীর জন্য এই ফোয়ারাকে নববর্ষের উপহার হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
এমআইএইচ/আরআর