এ মৌসুমে কৃষকের গোলায় ধান উঠতো, উৎসব হতো ঘরে ঘরে। উৎসব-আনন্দের বদলে এখন কেবলি বিষাদের ছায়া।
সন্তানদের লেখা-পড়া দূরে থাক, সারাবছর সংসার চলবে কিভাবে-সেই চিন্তায় উদ্বিগ্ন সর্বহারা হাওরপাড়ের মানুষ।
এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে না পারলে এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের উত্তর-পূর্ব জনপদে মারাত্মক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। যদিও জেলা প্রসাশন থেকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো হচ্ছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল।
এবার প্রবল বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট আগাম বন্যায় ফসলহানির পর বিপর্যয় নামে মৎস্যখাতেও। সেই সঙ্গে হুমকিতে প্রাণিসম্পদ। বিষাক্রান্ত মাছ খেয়ে ঝাঁকে-ঝাঁকে মারা যাচ্ছে খামারের হাঁস। পঁচা ধান, মরা মাছ, হাঁসের পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পানি ও বাতাসে। খাদ্যের পর দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়। লোকজন সর্তকতা অবলম্বন না করলে নানা রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পার। তাই বিপর্যয় ঠেকাতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মাছ খেয়ে সহস্রাধিক হাঁস মারা যাওয়ার নমুনা সংগ্রহ করে আমরা ঢাকায় পাঠিয়েছি। এসব হাঁস ডার্ক প্লেগ রোগে মারা যায়নি। ফলে হাওর পাড়ের লোকজনকে সতর্কতা অবলম্বনে পরামর্শ দেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক ডা. ইসলাম ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ধান ও মাছ পঁচার দুর্গন্ধ বাতাস ও পানি দুষিত করেছে। এই পানিতে গোসল, খাবার পানি ও রান্নার কাজে ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন।
দুর্গন্ধযুক্ত এই পানি ব্যবহার করলে মানবদেহের মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে বলেও তিনি জানান।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. জহির বিন আলম বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত আগাম বন্যা আসে এপ্রিলে। এ বছর মার্চ চলে এসেছে, এ সময়টাতে ফসলে কীটনাশক ছিটানো হয়। সেই কীটনাশক বন্যার পানিতে মিশে গেছে। তাতে অ্যামুনিয়া গ্যাসের প্রভাবে পানিতে অক্সিজেন কমে বিষক্রিয়ায় মাছ মরছে। আর এসব মরা মাছ খেয়ে হাঁস ও পাখি মরছে। এখন অধিক বৃষ্টি হলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্যাসের প্রভাব কমবে। নতুবা পানিতে প্রচুর পরিমাণে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে বাতাস মেলাতে হবে। অন্যথায় হাওরাঞ্চলে আমাদের জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষের মাঝেও এর প্রভাব পড়বে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি অনুষদের প্রধান ড. মাহবুব-ই-ইলাহী বাংলানিউজকে বলেন, অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে মাছ মারা যাচ্ছে। পানি ও বাতাস দূষণ হয়েছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে হাওরাঞ্চলের মৎস-পশু সম্পদ তথা জীব-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। প্রজনন মৌসুমে মাছ বিষাক্রান্ত হওয়ায় মাছের ঘাটতি দেখা দেবে। মাছ প্রজনন ক্ষমতা হারাবে। এ সব মাছ খেলে মানবদেহে টক্সিনের পরিমাণ বেড়ে মানুষ মারাও যেতে পারে! পানি শুকিয়ে গেলে অথবা বন্যার পানি বেড়ে গেলে এই প্রভাব কেটে যাবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ৬৬০ মেট্রিকটন চাল, ২৬ লাখ টাকা, প্রতি উপজেলায় কম মূল্যে ৩ মেট্রিক টন করে ওএসএম’র চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, শুধু কৃষিকে নয়, হাওরাঞ্চলের মানুষরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। প্রতি উপজেলায় দুর্গদের জন্য ত্রাণের দেওয়া ১০ লাখ টাকা ও ২১৪ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করেছেন। পাশপাশি ওএমএস চালুর জন্য সুপারিশ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
এনইউ/জিপি/এসএইচ