ঢাকা, সোমবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আমি একশতে একশ পেতে চাই

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
আমি একশতে একশ পেতে চাই ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন- ছবি- ডি এইচ বাদল

ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দুই বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছেন সাঈদ খোকন। আগামী ৬ মে শপথ গ্রহণের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি করবেন তিনি। দুই বছরপূর্তির প্রাক্কালে নগরভবনে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র। তারই চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনে আপনার অনুভূতি কী?

সাঈদ খোকন: আমার কাছে দায়িত্বটা এক্সপ্রেসফুল মনে হয়নি। অনেকে প্রশ্ন করেন চাপ বা চ্যালেঞ্জ মনে হয় কি না।

আমার কাছে ওরকম কিছু মনে হয়নি। ফিলিংস যদি বলেন, আমি এনজয় করেছি, আনন্দ পেয়েছি, পাচ্ছি। তবে কাজটা সহজ কোনো বিষয় না। অনেক সমস্যা থাকে সেটা ওভারকাম করেই কাজ করতে হয়।

দুই বছরে আপনি এই শহরকে কতটুক পরিবর্তন করতে পেরেছেন?

সাঈদ খোকন: আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই চিন্তা করেছিলাম, মেয়র হলে কী করবো। আমি দায়িত্ব গ্রহণের আগেই প্রথম ‍দুই বছরে নগরের মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। পুরো ঢাকার পরিবর্তনে হয়তো কয়েক দশক লেগে যাবে। যেহেতু আমার নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। সেই মেয়াদের মধ্যে আমার দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমাকে পালন করতে হবে। তাই আমার জন্য এই দুই বছর সিগনিফিকেন্ট সময়। যা আমার ৫ বছরের মেয়াদের ৪০ শতাংশ। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথমেই বিশাল আর্থিক ঘাটতি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সেখান থেকে পরিবর্তন করেছি। তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে পারিনি। আরও অনেক কাজ করতে হবে, অনেক কাজ করার আছে।
 
উল্লেখযোগ্য কী পরিবর্তন করেছেন?

সাঈদ খোকন: নগরের প্রধান সমস্যা রাস্তা, ড্রেনেজ সিস্টেম। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিএনসিসির ৩০০টি রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু করলাম। ইতোমধ্যে ১৫৪ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করে দিয়েছি। আমি নগরীর স্ট্রিট লাইট পরিবর্তন করে এলইডি লাইট স্থাপনের কথা বলেছিলাম। একটি প্রকল্প নিয়েছিলাম ৩৭ হাজার ২৩০/২৪০টি এলইডি বাতি লাগানোর। আগামী জুন-জুলাই নাগাদ এই কাজ শেষ হবে। আমার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিন মোটামুটি ৬৫-৭০ শতাংশ এলাকায় এলইডি বাতি বসানো সম্পূর্ণ হবে। এতে ছিনতাই রাহাজানি কমে গেছে। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন
 
আপনি তো দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছিলেন পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়বেন, সেটা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন?

সাঈদ খোকন: পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে আমি ডিএনসিসি এলাকায় ৫ হাজার ৭০০ ওয়েস্ট বিন লাগিয়েছিলাম। সেখান থেকে ২২০টা চুরি হয়েছে, ১৯৭টা নানা কারণে ব্যবহার অনুপযোগী। সব মিলিয়ে ৮শ’র কিছু বেশি ওয়েস্ট বিন ব্যবহার অনুপযোগী। দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৬ সালের প্রথম দিনে ভোরে রাস্তায় বের হয়ে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছিল-একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকেও ফিল্ডে পাইনি। পরে আমি সবাইকে মোবাইল দিয়ে ট্রাকিং করা শুরু করলাম। এখন শতভাগ না হলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে। পরিচ্ছন্ন ঢাকা বলতে আমরা যেটা বুঝি, আমাদের যে টার্গেট, সেই টার্গেটে এখনও পৌঁছাতে পারিনি। তবে ইমপ্রুভ হয়েছে। আমাদের কাজ কন্টিনিউ করতে হবে।   আমরা যে শহর দেখতে চাই , আমাদের স্বপ্নের জায়গায় এখনও পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে। তবে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনগুলো করতে পারলে বড় একটা পরিবর্তন আসবে। আমরা যদি ৩০-৪০টা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনও করতে পারি অনেক কাজে আসবে।

নগরের মৌলিক সমস্যার মধ্যে জলাবদ্ধতা অন্যতম। এ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

সাঈদ খোকন: দায়িত্ব গ্রহণের আগে ড্রেনেজ সিস্টেম অত্যন্ত বাজে অবস্থায় ছিলো। জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। সেখান থেকে অনেক পরিবর্তন করেছি। এই বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা কমের পক্ষে ৮৫ শতাংশ কমে যাবে। বিশেষ করে শান্তিনগর এলাকায় আগামী জুনের মধ্যে ৮৫ ভাগ জলাবদ্ধতা কমে আসবে। মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার জুন-জুলাই নাগাদ শেষ হবে। আমাদের কাজও জুন-জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে। সব মিলিয়ে এই আগষ্টের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে। তখন ভোগান্তি কমে যাবে। উন্নয়ন করতে গেলে ভোগান্তি হবে কিন্তু তার একটা মাত্রা আছে। মৌচাক-মগবাজার, শান্তিনগরে সেই মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
 
নির্বাচনের আগে নগরীর প্রধান প্রধান সমস্যা সমাধানে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে কি?
 
সাঈদ খোকন: দুই একটি ছাড়া নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে স্মার্ট ও নিরাপদ নগরী, সবুজ ঢাকা, পরিচ্ছন্ন ঢাকা, বাসযোগ্য, যানজট, জলাবদ্ধতা, মশা নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত, বর্জ্যমুক্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ফুটপাত দখল মুক্ত, সড়কবাতি, খাল উদ্ধার, পার্ক উন্নয়ন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তাসহ বেশকিছু প্রতিশ্রুতি প্রায় বাস্তবায়ন হয়েছে। বড়বড় কিছু কাজ বাস্তবায়ন প্রায় শেষ মুহূর্তে। এখন বিচারের দায়িত্ব নগরবাসীর।

আপনার বাবা মেয়র ছিলেন, আওয়ামী লীগের বড়মাপের নেতাও ছিলেন। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনীতিতে অনেকটা নিষ্ক্রিয় মনে হচ্ছে?

সাঈদ খোকন: রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়েছি কথাটা ঠিক না। দলের প্রধান প্রধান প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর যে প্রোগ্রামগুলো থাকে। তবে আমি যে চাকরিটা করি। আমি দায়িত্বটা সুচারুভাবে করতে চাই। দায়িত্ব পালনে একশতে একশ পেতে চাই। যে কারণে এখানে টাইমটা বেশি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
এসএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।