ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ইউসিসি কোচিংয়ের কাণ্ডজ্ঞান!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
ইউসিসি কোচিংয়ের কাণ্ডজ্ঞান! উপরে নিষেধাজ্ঞা, নিচে পোস্টার। ছবি: ‍মানজারুল ইসলাম

খুলনা: ‘দেওয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধ’ লেখাটা জ্বলজ্বল করছে চোখের সামনে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে ওই লেখার নিচেই বিজ্ঞাপনী পোস্টার সাঁটিয়েছে ইউসিসি কোচিং। দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর খুলনা ব্যুরো অফিসের দেয়ালে এই পোস্টার সাঁটানোর ঘটনাকে ইউসিসি’র কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। প্রশ্ন তুলছেন, তাদের শিক্ষার সামর্থ আর পদ্ধতি নিয়েও।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বাংলা নিউজ অফিসের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এনামুল হক নামে এক পথচারী বলেন, ইউসিসি’র পোস্টার আগ্রাসন থেকে তাহলে মিডিয়া হাউজও রেহাই পেলো না! কি কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ কারবার ওদের!

তার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের তিনি বলেন, এই কোচিংয়ে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে! লেখা আছে পোস্টার লাগানো নিষেধ, তারপরও টানিয়েছে।

মহানগরীর ৬১/৩ খান জাহান আলী রোডের মডার্ন ফার্নিচারের মোড়ে বাংলানিউজ খুলনা ব্যুরো অফিসের দেয়ালেই শুধু নয়, শহরের অনেক কংক্রিটের নির্বাক দেয়ালেই ইউসিসি’র এই পোস্টার আগ্রাসন দেখা গেছে।

ইউসিসি খুলনা প্রধান শাখা ও দৌলতপুর শাখার পোস্টার যত্রতত্র সমানে সেঁটেছে তারা। বিশেষ করে সদ্য রঙ করা আর ঝকঝকে দেয়ালগুলোতেই তারা পোস্টার সেঁটেছে বেশী। বাংলানিউজের খুলনা ব্যুরো অফিসের দেয়ালে ই্‌উসিসির পোস্টার।  ছবি: মানজারুল ইসলাম

দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২ উপেক্ষা করে বাড়ির দেয়াল, ভবন, অফিস-আদালত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল, বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি, এমনকি যাত্রী ছাউনিগুলোও ইউসিসি’র পোস্টারে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

তাদের এমন কাণ্ডে নতুন করে আলোচনায় এসেছে মিথ্যা ছবি ও ভুল তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা। এর আগে ওই কাণ্ড করে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।

হাজার হাজার প্রসপেক্টাস, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ঢাকা শাখার সাফল্যকে খুলনার দু’টি শাখার সাফল্য হিসেবে দেখিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আকৃষ্ট করে ইউসিসি।

এ শাখা দু’টির প্রসপেক্টাসে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেখানো হয় ৩৮১ জন। অথচ এ দুটি শাখা থেকে হাতে গোণা ক’জন ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন বলে নিশ্চিত হয় বাংলানিউজ। এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর কোচিংটি অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। এখন ফের গা ঝাড়া দিয়ে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সরলমতি শিক্ষার্থীদের বাগিয়ে নিতে চাইছে। খুলনা নগরের দেয়ালে ইউসিসির পোস্টার।  ছবি: মানজারুল ইসলাম

খুলনার দু’টি শাখার পরিচালক সরোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলানিউজ অফিসের দেয়াল থেকে পোস্টার খুলতে এখনই লোক পাঠাচ্ছি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তায় নামলেই শুধু  পোস্টার আর পোস্টার, বিব্রতকর পোস্টারও চোখে পড়ে। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপন। সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও বাসা-বাড়ির দেয়াল, রাস্তার মোড়, লাইটপোস্ট, রাস্তার পার্শ্ববর্তী গাছ আর অলিতে-গলিতে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ বেআইনি কর্মকাণ্ড চলছে। এ কারণে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে শহরের।

জনসাধারণকে এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক (অতি. দায়িত্ব) টিএম জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কোচিং নিষিদ্ধ, দেয়ালে পোসটার লাগানোও নিষিদ্ধ। যারা এই বেআইনি কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়:  ১৭২৬  ঘণ্টা,  এপ্রিল ২৭, ২০১৭
এমআরএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।