ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

লাখাইয়ের ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
লাখাইয়ের ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট

হবিগঞ্জ: পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফিলতির কারণে বাঁধ ভেঙে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার ৩০ হাজার কৃষক পরিবার।

বাঁধ ভেঙে খোয়াই নদীর পানিতে নষ্ট হয়েছে কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা সোনালী ফসল। এতে উপজেলার আট ইউনিয়নের দুর্গত মানুষের হাহাকার বেড়ে চলেছে।

হাওর থেকে কাঁচা পাকা ও পচে যাওয়া ধান সংগ্রহ করতে প্রতিদিনই কৃষকেরা ছুটছেন নৌকা নিয়ে। শত চেষ্টা করেও একটু ফসল ঘরে আনতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা।

লাখাই উপজেলার কৃষকদের দুঃখ হিসেবেই যেন পরিচিত খোয়াই নদী। প্রতিবছরই খোয়াই নদীর পানিতে চন্দ্রপুর এলাকার হেলারকান্দি বাঁধটি ভেঙে ফসলের কম-বেশি ক্ষতি হয়। কৃষকদের দাবির মুখে সরকার সম্প্রতি এ বাঁধটি নির্মাণে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরুর নির্দেশও দেয়া হয় ঠিকাদারকে। কিন্তু এতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিপাতের কথা বিবেচনায় না নিয়ে আসছে জুন মাসে কাজ শেষ করার সময় বেধে দেয়া হয় ঠিকাদারকে। কৃষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বার বার সতর্ক করার পরও বোরো মৌসুমের আগে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে টানা বর্ষণে ২৬ মার্চ ভেঙে যায় পরিত্যক্ত মাটির এ বাঁধটি। ফলে খোয়াই নদীর প্রবল স্রোতে ভেসে যায় হাজারো কৃষকের স্বপ্নের ফসল। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা কৃষকেরা এখন সরকারি সহায়তার আশায় বুক বেধে আছেন। পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পেলে পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটাতে হবে তাদের।

লাখাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, বাঁধটি ভেঙে খোয়াই নদীর পানি ঢুকে প্রতিবছরই লাখাই উপজেলার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য এ বছরের শুরুতেই জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বাঁধ নির্মাণের তাগাদা দিয়েছিলাম আমি। কিন্তু এতে গুরুত্ব দেননি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

এমন ভয়াবহ অকাল বন্যার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই দায়ী করেন তিনি।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, স্থায়ীভাবে এ বাঁধটি নির্মাণের জন্য জুন পর্যন্ত সময় দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে পানি বাঁধ ছাপিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে প্রাথমিকভাবে নির্মিত মাটির বাঁধটি ভেঙে ফসল তলিয়ে গেছে।

লাখাই উপজেলায় মোট ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে এবার। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসলই পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বেশির ভাগই সুদ করে আনা টাকায় চাষাবাদ করেছিলেন। সরকার আগামী বছর ধান ওঠার আগ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো ঋণের টাকা পরিশোধের কিস্তি দিতে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এ বছর তাদের যে পরিমাণ ক্ষতি হলো তা কতোদিনে পূরণ হবে জানা নেই তাদের। এ অবস্থায় সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগস্ত কৃষকেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৮১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।