ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার বাজার থেকে সংগ্রহ করা মাছে নাকি ফরমালিনের অস্তিত্ব পেয়েছে রাজ্যের একটি সংস্থা। যে কারণে ১ মাস ২০ দিন ধরে বন্ধ মাছ রপ্তানি।
বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
ত্রিপুরায় মাছ রপ্তানিকারক ফারুক আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে মাছ রপ্তানি হয় এটা একটি পক্ষ চাচ্ছে না। যে কারণে ত্রিপুরায় মাছ রপ্তানি বন্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আগরতলা বাজার থেকে যে মাছগুলো সংগ্রহ করে ল্যাব পরীক্ষা করে ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, সেগুলো যে বাংলাদেশের মাছ তার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি। হয়তো কেউ চাচ্ছে না মাছ রপ্তানি হোক।
অপর ব্যবসায়ী শানু ইসলাম বলেন, রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশের কিছু মাছে ফরমালিন মিলেছে। যে কারণে মার্চের ৬ তারিখ থেকে ত্রিপুরায় মাছ রপ্তানি বন্ধ। কিন্তু ভারতের যে পত্রিকায় মাছে ফরমালিন রয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে সেগুলো যে বাংলাদেশের মাছ সেটা বলা হয়নি। একটি পক্ষ চাইছে না বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনো মাছ রপ্তানি হোক।
ভারতে মাছ রপ্তানি না হওয়ায় বাংলাদেশের মাছ ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে বলেই মত এ ব্যবসায়ীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, আগরতলার বিভিন্ন বাজার থেকে ৪০টি মাছ নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে ভারতের একটি সংস্থা। পরে এসব মাছ পরীক্ষা করে ৫-৬টি মাছে ফরমালিন পায়। কিন্তু ফরমালিন পাওয়া মাছগুলো যে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মাছ তা নিশ্চিত নয়। মূলত ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ থেকে আগরতলায় আসা মাছেই ফরমালিন পাওয়া গেছে। এখানে নিশ্চয় কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে। সেটা যে পক্ষ থেকেই হোক।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, আখাউড়া দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন মাছ আগরতলায় রপ্তানি করা হয়। এসব মাছের বাজারমূল্য প্রতি কেজি আড়াই (১ ডরার=৮২ টাকা)। আখাউড়া থেকে চারটি প্রতিষ্ঠান আগরতলায় মাছ রপ্তানি করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, নলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, ট্যাংরা, পুঁটিসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ রপ্তানি করা হয়।
এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শরিফুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে মাছগুলো আখাউড়া দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়, সেগুলো পরীক্ষা করে ফরমালিনমুক্ত সনদ দেওয়া হয়। তারপর সেগুলো রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ থেকে ফরমালিনযুক্ত কোনো মাছ আখাউড়া দিয়ে রপ্তানি হয় না।
আখাউড়া স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, মাছে ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়ায় ভারতের ত্রিপুরায় মাছ রপ্তানি বন্ধ। তবে কাস্টমস দিয়ে যে মাছগুলো ভারতে যায় সেগুলো ফরমালিন আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করেই রপ্তানির অনুমতি দেয় কাস্টমস।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশি মাছে ফরমালিন পাওয়ায় ভারতে মাছ রপ্তানি সাময়িক বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ফরমালিনযুক্ত কোনো মাছ বিদেশে রপ্তানি হয় না। ফরমালিন পাওয়া মাছগুলো বাংলাদেশের কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া এর পেছনে কোনো পক্ষ কাজ করছে কিনা সেটাও বের করা হবে। খুব শিগগিরই ভারতে আবার মাছ রপ্তানি শুরু হবে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
এসজে/এএ