ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ধানকাটা শ্রমিক সংকটে দিশেহারা কৃষক

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
ধানকাটা শ্রমিক সংকটে দিশেহারা কৃষক ধানকাটা শ্রমিক সংকট- ছবি- আরিফ জাহান

বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত ঘুরে: উত্তরের জেলা শহর গাইবান্ধা থেকে বাসযোগে একদল শ্রমিক আসেন বগুড়া শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। দলনেতা আবুল হোসেনের সঙ্গে ১০-১২ জন শ্রমিক কাস্তে, সিকা, ভাড় ও কাপড়ের পোটলা নিয়ে টার্মিনাল এলাকায় নেমে সুবিধাজনক স্থানে বসেন।
 
 

এদিকে ধানকাটা শ্রমিকের খোঁজে ভোরে বাড়ি থেকে ওই টার্মিনালের উদ্দেশ্যে বের হন কৃষক আমজাদ হোসেন। ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে যান শ্রমিক দলনেতা আবুল হোসেনের কাছে।

এসময় আরো কয়েকজন কৃষক এ দলটির আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করছিলেন।
 
কিন্তু দামদরে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিলো না। এ সময় আমজাদ হোসেন জানতে চাইলে প্রতিবিঘা জমির ধানকাটা মাড়াইসহ আনুষঙ্গিক কাজে আবুল হোসেন পারিশ্রমিক চেয়ে বসেন সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
 
শেষমেষ ৩ হাজার টাকায় মিটমাট হয়। সঙ্গে দিনে তিন বেলা খাবার (দু’বেলা মাছের তরকারি শর্ত) ও থাকার ব্যবস্থা। টানা তিনদিন চেষ্টার পর এ শ্রমিক দল নিয়ে ধানকাটায় নেমে পড়েন কৃষক আমজাদ হোসেন।
 
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার এ বাসিন্দা চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে মিনিকেট ও কাজললতা জাতের ধান লাগিয়েছেন। ধানকাটা শ্রমিক সংকট- ছবি- আরিফ জাহান  
 
এরকম পারিশ্রমিক দিয়েও চাহিদা মতো ধানকাটার শ্রমিক মেলাতে পারছেন না জেলার কৃষকরা। আবার কোথাও মেলাতে পারলেও সেই শ্রমিক নিয়ে নিজেদের মধ্যে শুরু হচ্ছে টানাটানি। তবু কৃষকের ধানকাটার জন্য চাই শ্রমিক বা কামলা (স্থানীয় ভাষায়)।  
 
জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ধানকাটার শ্রমিক সংকটের এমন চিত্র উঠে আসে।
 
সম্প্রতি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতি বৃষ্টিতে উঠতি বোরো ফসল মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। ঝড়ো হাওয়ায় জমির ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় অনেক খেতের ধানগাছ। তাতে পচন ধরে। বৈরী আবহাওয়ায় ধান গাছ নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। রোগ আর শীলাবৃষ্টির কারণে অনেক খেতের ধান চিটায় পরিণত হয়।
 
তবে গত কয়েকদিন বৃষ্টিপাত বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে ধানকাটতে জমিতে নেমে পড়েন কৃষক। কিন্তু ধানকাটা শ্রমিক মেলানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকের জন্য তারা বিভিন্ন এলাকায় হন্যে হয়ে ঘুরছেন। জেলার সর্বত্রই কমবেশি আগামজাতের ধানকাটা চলছে।
 
রেজাউল করিম বাবলু, ইকবাল হোসেন, মো. রানা, মফিজুল ইসলাম, জামাল উদ্দিনসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর, ‍ধুনট, বগুড়া চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় সপ্তাহখানেক ঘুরে ধানকাটার জন্য শ্রমিক ঠিক করেন।  
 
চুক্তি অনুযায়ী জমির দূরত্ব বুঝে প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে ধানকাটা বাবদ ২৫০০-৩০০০টাকা পারিশ্রমিকে শ্রমিক ঠিক করতে হচ্ছে।  
 
তারা আরো জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ক্ষেতের ফসল ক্ষতির মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় ধানকাটতে না পারলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। তাই বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে হলেও ধানকাটতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
 
তবে বর্তমানে বাজারে ধানের দাম ভালো। শ্রমিকের মজুরি বেশি হলেও তারা এখনো লাভের মধ্যে রয়েছেন বলেও যোগ করেন এসব কৃষকরা।     
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।