ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সাজেকে খাদ্য সংকট, অনাহারে প্রান্তিক জনপদের মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
সাজেকে খাদ্য সংকট, অনাহারে প্রান্তিক জনপদের মানুষ সাজেকে খাদ্য সংকট, অনাহারে প্রান্তিক জনপদের মানুষ-ছবি: বাংলানিউজ

রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ৬০ গ্রামে খাদ্য সংকট চরমে। খাদ্য সংকটে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে প্রান্তিক জনপদের প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার পরিবার।

জুম চাষ, বাঁশ ও বেতের ওপর ভরসা এ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। কয়েক বছর ধরে জুমে চাহিদানুযায়ী ফসল উৎপাদন না হওয়া এবং উৎপাদিত পণ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে বিক্রি করতে না পারায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে দুর্গম ইউনিয়নের এ গ্রামগুলোতে।

সাজেকের দুর্গম গ্রামগুলো হলো- উদোলছড়ি, বলপেয়ে, নতুন জৌপুই, পুরান জৌপুই, নিউ থাংমাং, ব্যাটলিং, তারুমপাড়া, কমলাপুর, লংত্যাং, অরুনপাড়া, কাচ্ছ্যাপাড়া, শিয়ালদাই, গণ্ডাছড়া, থলছড়া, এগজ্যাছড়ি, মোন আদাম, ধাব আদাম, হলকপাড়া, উদলছড়ি, বদলছড়ি, নিমুইপাড়া, হগড়া হেজিং, দুলুছড়ি ও দুল বন্যা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওইসব গ্রামে এখন প্রতি কেজি চালের দাম ১০০ থেকে ১৩০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। টাকার অভাবে ওই ইউনিয়নে বসবাসরত বাসিন্দারা অনাহারে দিন যাপন করছেন।
 
সাজেকে অধিকাংশ মানুষ জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। জুম চাষ করে যা উৎপাদন হয় তা দিয়ে তাদের সারা বছর কেটে যায়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে জুম চাষে উৎপাদন কম হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছেন বলে সাজেকবাসীরা জানান।

দুলুছড়ি গ্রামের নয়ন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে খাদ্য সংকটে ভুগছি। জুমে চাষে চাহিদানুযায়ী ধান উৎপাদন হচ্ছে না।

নতুন জৌপুই গ্রামের বিজয় সেন চাকমা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। শুধু নির্বাচনে ভোট দেওয়া ছাড়া কোনো অধিকার নেই আমাদের। জুম চাষেও আগের মতো ধান উৎপাদন হয় না। আগে জুমে উৎপাদনের পণ্য দিয়ে সারা বছর চলতো। এখন তিন মাসও চলে না।

বদলছড়ি গ্রামের সোনা রঞ্জন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, এখানে চরম খাদ্য সংকট চলছে। এক কেজি চালের দাম ১০০ টাকা ১২০ টাকা। তাও সব সময় পাওয়া যায় না। অনেক মানুষ না খেয়ে থাকছে বলেও তিনি জানান।

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নেলশন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, দুই-এক মাস থেকে সাজেকের প্রায় ৬০টি গ্রামের প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার পরিবারের মধ্যে তীব্র খাদ্য সংকট চলছে।

তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছি এবং ইউএনও বরাবরে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় দুই মাস আগে ছয়শ’ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রাণালয়ে আবেদন করেছিলাম। তবে ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানতে পারলাম অতিসত্তর আমাদের চাহিদানুয়ায়ী বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

চেয়ারম্যান বলেন, খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছে যাওয়ায় সম্প্রতি সময়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমন্বয় করে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ভাইস চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়ে ১৬টি গ্রামের ৪১০ পরিবারের মধ্যে চার হাজার একশ’ কেজি চাল বিতরণ করেছি।

তিনি আরো বলেন, বাঘাইছড়ি জোনের পক্ষ থেকে সোমবার (১ মে) মাচালং থানা, গঙ্গারাম এবং কংলাখ এলাকায় চার মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে। এসব মানুষদের দুর্ভোগ লাগবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে তিনি সহযোগিতা কামনা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
আরবি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।