ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

উন্মোচিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বীর

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
উন্মোচিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বীর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য ‘বীর’/‍ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মাথা তুলে যেনো বীরত্বেরই জানান দিচ্ছে ‘বীর’। ৫৩ ফুট উঁচু অবয়বটায় সূর্যের ঝিলিক। নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন শত্রুসেনার ওপরে। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের পশ্চিম পাশে নিকুঞ্জের ১ নম্বর গেটের সামনে নির্মীয়মাণ এই ‘বীর’ই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য।

বিকেলের সূর্য পড়েছে সোনালী আয়রন পাতের ভাস্কর্যের ওপর। সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে জ্বল জ্বল করছে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের অবয়বগুলো।

এই বীর দক্ষিণ দিক থেকে কুড়িল ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে হাতের বামে গত ৫ মাস ধরেই চট দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল। ভাস্কর্যের মূল ফাউন্ডেশনের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় দিন তিনেক ধরে চলছে  পরিষ্কারের কাজ। চারিদিক পরিষ্কার করার পর ফের রঙ চড়ানো হবে বলে জানালেন  পরিচ্ছন্নতা কর্মী রিপন।
 
এ পথে হাঁটা মানুষের সংখ্যা কম। বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচলের ব্যস্ততা। নিকুঞ্জ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ক’জন পথচারী মোবাইলে ফ্রেম বন্দি করছেন বীরকে। দু’একজন ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়েও ছবি তুলছেন।

গাড়ি থেকে নেমে এলেন সাদা কালো চুলের মোস্তফা জব্বার। বেশ আগ্রহ নিয়ে বীরের দিকে তাকিয়ে থাকেন বাংলাদেশ কম্পিউট‍ার সমিতির সাবেক সভাপতি ও বেসিস সভাপতি। নিজ মোবাইলে ছবিও তোলেন।
 
মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য দেখে খুশি হন তিনি। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন,  আমাদের দেশের জনগোষ্ঠীকে দু’একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে কিন্তু বিচার করা যাবে না। সাধারণ মানুষ নিজের সংস্কৃতি নিয়ে থাকে, সাহিত্য নিয়ে থাকে। একই সঙ্গে নিজেদের ধর্ম-কর্মও করে। এমন শান্তিপূর্ণ জাতি আর কোথায়ইবা আছে।
 
এই মে মাসেই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই ভাস্কর্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর সড়কের সৌন্দর্যায়নে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের সিইও আবেদ মনসুর।
 
রোববার বিকেলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
 
তিনি বলেন, এখনো ফাউন্টেন অংশ আর ল্যান্ড স্কেপিং বাকি আছে। সেখানে ১৫টি মোটর বসবে। নিয়ন এলইডি বাতি ৭ রঙের আলো দেবে। সেই ৭ রঙ বীরশ্রেষ্ঠদের কথা স্মরণ করবে। সবমিলিয়ে পৌনে ৪ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে এই ভাস্কর্যে।
 
ভাস্কর্যটিতে যে চারটি ফিগার রয়েছে তার মধ্যে একজন মুক্তিযোদ্ধা হানাদার বাহিনীকে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারছেন। তার সামনে দু’জন নারী ও পুরুষ অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন শত্রু সেনার ওপর। বসে নিশানায় রাইফেল তাক করে আছেন আরেক মুক্তিযোদ্ধা। পেছনে তৎকালীন বাংলাদেশের পতাকা।
 
শত বছরের আয়ু নিয়ে নির্মাণ করা এই ভাস্কর্য বাংলাদেশের অন্য সব ভাস্কর্য থেকে স্বতন্ত্র এবং দৃষ্টিনন্দন। ৫৩ ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্যের দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট। বেড়ে ৬২ ফ‍ুট।
 
চারুকলা থেকে পাশ করা কয়েকজন মেধাবী তরুণ গ্রুপ স্টাডির মাধ্যমে ‘বীর ভাস্কর্য’ নির্মাণ করেছেন। মূল ডিজাইন করেছেন চারুকলার পেন্টিং বিভাগ থেকে সদ্য পাশ করা হাজ্জাজ কায়সার। এতোদিন পর্যন্ত রাঙ্গামাটি ক্যান্টনমেন্টে ৫০ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত সর্বোচ্চ ভাস্কর্য। বিমানবন্দর সড়কে ‘বীর’ এখন নিলো সর্বোচ্চ উচ্চতার তকমা।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৮ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।