ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আজ মহান মে দিবস

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
আজ মহান মে দিবস

ঢাকা: আজ মহান মে দিবস। শ্রমিকের শ্রমের-ঘামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন। তাই বিশ্বের দেশে দেশে শ্রমের ন্যায্য মূল্য আর শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিনটি উপলক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সাধারণ ছুটি অব্যাহত রেখেছে। হাতে নিয়েছে নানা কর্মসূচিও।

‘শ্রমিক-মালিক গড়বো দেশ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’ স্লোগানকে সামনে রেখে সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দিবসটি পালনে দুই দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ১ মে সকাল সাড়ে সাতটায় রয়েছে দৈনিক বাংলা মোড থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত বর্ণাঢ্য ৠালি।

শ্রমপ্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের নেতৃত্বে ৠালিতে উপস্থিত থাকবেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানসহ জনপ্রতিনিধি, সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ও বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন প্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতারা। এরপর বিকেলে সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে রয়েছে আলোচনাসভা। ২ মে রয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনাসভা।

 
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলের নেতা, বিএনপির চেয়ারপার্সন বাণী দিয়েছেন। পত্রিকাগুলো বের করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বেসরকার উন্নয়নসংস্থা, টেড ইউনিয়নগুলোও হাতে নিয়েছে আলোচনাসভা ৠালীসহ নানা কর্মসূচি।

আজ থেকে ১৩১ বছর আগে  পহেলা মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের ন্যায্যমূল্য ও দৈনিক সর্বোচ্চ আট ঘণ্টার কাজের দাবিতে ঘর্মঘট আহ্বান করেন শ্রমিকরা। এতে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক অংশ নেন। শ্রমিকদের আন্দোলন দমন করতে সেদিন সমাবেশে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে অনেকে নিহত হন। এছাড়া গ্রেফতার করা হয় অনেককে। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে ৬ শ্রমিককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয় সে সময়কার শাসকগোষ্ঠী। কারাগারে বন্দি অবস্থায় এক শ্রমিক আত্মহননও করেন।
এই আন্দোলনের ফলে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের পথ প্রশস্ত হয়। মালিকরা স্বীকার করে নেয়, শ্রমিকদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। কাজের সময়সীমা কমে নেমে আসে ৮ ঘণ্টায়। এরপর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শ্রমিকের অধিকার আদায়ে একটি দিবস পালনের জন্য পহেলা মে ‘মে দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়ে আসছে।
 
বাংলাদেশ সরকার শুধু দিবসটি পালনই নয়, শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় আইনেও অনেক পরিবর্তন করেছে, সংযোজন এনেছে। গঠন করা হয়েছে শ্রমআদালত। যেখানে শ্রমিককে মামলা লড়ার সামর্থ্য না থাকলে বিনামূল্যে আইনি সহায়তাও দেওয়া হয়।

 গর্ভবতী মা-শ্রমিকের জন্য বেতন ভাতাসহ ১১২ দিনের ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানের আগে ৫৬ দিন ও পরে ৫৬ দিন ছুটি পান তিনি। এছাড়া জন্মদানের সময় মা মারা গেলে সন্তানকে উত্তরাধিকারী কল্যাণ ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আর সন্তান মারা গেলে স্বামীকে উত্তরাধিকারী ভাতা প্রদানের বিষয়টিও আইনে উল্লেখ রয়েছে।

সরকারের একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী আইনের কারণে দেশে এখন কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বলতে গেলে প্রায় কোনো শ্রমিককেই আর মালিকরা বিনা নোটিশ বা পারিশ্রমিক ব্যতিরেকে চাকরিচ্যুত করতে পারে না। এক্ষেত্রে অন্তত তিন মাসের নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করতে হয়। এ সময়টায় শ্রমিক তার বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন। অথবা বেতন-ভাতা পরিশোধ করে তবেই চাকরিচ্যুত করা যায়।
শ্রমআদালতও রায় শ্রমিকের পক্ষেই যায়। একটি কথা প্রায় প্রচলিতই হয়ে গেছে, যে শ্রমআদালতে মামলা করলে শ্রমিক হারে না। আজ বা কাল, যেদিনই হোক মালিককে তার পাওনা পরিশোধ করতেই হয়।

তবে গার্মেন্টশিল্প বা বিভিন্ন ধরণের কারখানার শ্রমিকের নিরাপত্তা ও স্বার্থরক্ষার বিষয়টিতে প্রায় সময়ই ব্যত্যয় দেখা যায়। বিশেষ করে হুটহাট কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা কিংবা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার বিষয়গুলো এখানো মীমাংসিত নয়।

এ বিষয়ে অবশ্য শ্রমপ্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে, দুর্ঘটনাকবলিত শ্রমিকদের সহায়তার জন্য  তহবিল গঠন করার বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। যেখানে শ্রমিক, মালিক, সরকার সবারই একটা অংশগ্রহণ থাকবে।

শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতে আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংস্থাও এসব বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে সরকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর আন্তরিকতা লক্ষ্য করা গেলেও মালিকদের অনেকেই এ বিষয়ে সহায়তা করছেন না। যে কারণে প্রায় সময়ই কারখানা শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৩ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৭
ইইউডি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।