গত কয়েক দিনের এ তিক্ত অভিজ্ঞতা বাংলানিউজকে বলছিলেন মালিবাগ মৌচাক এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি একটি টেলিকম কোম্পানিতে কর্মরত মাহমুদ হাসান রুবেল। তার ছেলে পড়ছে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
একধরণের ‘পরিত্যক্ত’ এলাকা বলে অন্যান্য এলাকার কেউ বা সড়কপথের যাত্রীরা এড়িয়ে যেতে চান মালিবাগ-মৌচাক। তবু প্রয়োজনের তাগিদে চলাচল থামে না। পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। বৃষ্টিতে এ দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। শুরু হয়েছিলো তিন বছর আগে থেকে। রিকশা উল্টে যাওয়া, গাড়ি আটকে যাওয়া---এমন দুর্ঘটনার চিত্র দেখা যায় হরহামেশা। তার সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরেবন্দি জীবন!
মক্কা ট্রেডার্স নামে এক দোকানের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলছিলেন, ‘আমি গত বছর আমার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু বাড়ি তো আর বিক্রি করে দিতে পারি না। ধুলোবালি ছিলো এক মৌসুমে; আরেক মৌসুমে বন্যা পরিস্থিতি--- ক্রেতা তো আর পানিতে ভেসে দোকানে আসবে না। উল্টো দোকানের জিনিসপত্র রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। এ অবস্থায় ব্যবসার ঠিকানা পরিবর্তন করে নিয়েছি। ’
আশেপাশের মানুষ ও পথচারীদের সঙ্গে কথাবার্তায় বোঝাই যাচ্ছে রাজধানীর ঢাকার সবচেয়ে দুর্ভোগের এলাকা মালিবাগ-মৌচাক।
গত বছর থেকে মালিবাগ, শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার এলাকার সড়ক কার্যত ‘পরিত্যক্ত’ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
তারপরও গাড়ি চলছে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে। নির্মাণ-ত্রুটির কারণে শ্রমিক ও পথচারীর মৃত্যুর একাধিক ঘটনারও সাক্ষী মালিবাগ-মৌচাক।
উন্নয়নের এমন ‘ভোগান্তি’র মুখোমুখি হননি রাজধানীবাসী। এ কারণে নতুন করে আর ফ্লাইওভার নির্মাণে আপাতত আগ্রহ নেই সরকারের। আরও যে দুটি ফ্লাইওভারের চিন্তাভাবনা ও প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে তার নির্মাণ শুরু হবে আগামী মেয়াদের সরকারের আমলে।
তার আগে দু:সহ দুর্ভোগের কঠিন বাস্তবতা পেরিয়ে যেতে হচ্ছে মালিবাগ-মৌচাকের বাসিন্দাদের। প্রকল্পে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট-এর দিকটি বিবেচনা করা হয়নি বলে দুষছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সমন্বয়হীনতার অভিযোগ ছিলো শুরু থেকেই। একাধিকবার তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ ও আল্টিমেটাম দিয়েছেন সেতুমন্ত্রী। তাতেও কাজ হয়নি।
প্রকল্প সূত্রের সবশেষ খবর: আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হচ্ছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজ। সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন নির্মাণের কারণে রাজারবাগ, মালিবাগ, মৌচাকসহ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা বেড়ে গিয়েছিলো---দোষ চাপছেন এই প্রকল্পের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আর দেশের দীর্ঘতম এ ফ্লাইওভারটির তিন অংশের একটি তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে রমনার হলি ফ্যামিলি। অন্যটি বাংলামোটর থেকে মৌচাক পর্যন্ত। আরেকটি মালিবাগের আবুল হোটেল থেকে মৌচাক হয়ে রাজারবাগ-শান্তিনগর পর্যন্ত। এর মধ্যে গত বছরের মাচ মাসে নির্মাণ শেষে সাতরাস্তা থেকে হলি ফ্যামিলি পর্যন্ত ২ দশমিক ১১ কিলোমিটার ফ্লাইওভার চালু হয়।
চার বছর আগে ২০১৩ সালে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ শুরু হয়েছিলো। ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিনদফায় সময় বেড়ে এখনও শেষ হয়নি। মাঝে ভুল নকশার জন্য আনতে হয়েছে পরিবর্তন।
ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানার যৌথ প্রতিষ্ঠান সিমপ্লেক্স নাভানা জেভি, চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য নাম্বার ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। প্রথম ধাপে প্রকল্পের খরচ ছিল ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে এ খরচ নির্ধারণ করা হয় ৭৭২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তবে এখন প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৮ দশমিক ৮৯ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৫ ঘন্টা, মে ০১, ২০১৭
এসএ/জেএম