হোসনে আরা যে বাড়িতে থাকেন সেখানে তার পাশাপাশি রয়েছে আরো দশটি ঘরের বাসিন্দারা। প্রতি ঘরেই রয়েছে এক একটি পরিবার।
অসুস্থ শরীর নিয়েই কাজ করেন হোসনে আরা। প্রায়ই কাজের নির্দিষ্ট কোটা পূরণ না করতে পারায় কাটা যায় বেতন। হোসনে আরার মতো বেশিরভাগ শ্রমিককেই এভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে হয়। আর রোগ-বালাইয়ে ভোগার কারণে তাদের প্রায় সবারই কাজে পড়ে নেতিবাচক প্রভাব।
শুধু হোসনে আরারই নন, বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ শ্রমিকই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন করছেন বলে জানা যায় গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চ-সূত্র থেকে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, শ্রমিকরা কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হলেও মাসে দু-একদিন তারা কাজে আসতে পারেন না অসুস্থতার কারণে। আর এই অসুস্থতার মূল কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস। ফলে যে পরিমাণ উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে তা কমে যাচ্ছে। সে হিসাবে একজন শ্রমিক অসুস্থ থাকার কারণে সক্ষমতার তুলনায় ১০ শতাংশ কম কাজ করতে পারেন।
এসব বিষয়ে নজর রেখেই ডরমেটরি করার কথা ভাবছেন গার্মেন্টস মালিকরা। জানিয়েছেন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে অনেক সময় শ্রমিকরা কাজে আসতে পারছেন না। তারা যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করেন তাতে সুস্থ থাকা খুব কঠিন। এজন্য প্রয়োজন শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরি। কিন্তু সেই কাজটা সরকারকেই করতে হবে। আমরাও চেষ্টা করছি। কিন্তু সেক্ষেত্রে যে স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দরকার তা সরকারকেই দিতে হবে।
শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরি করার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিকরা বস্তিতে বেহাল জীবনযাপন করে যা চোখে দেখার মতো না। রোগশোক লেগেই থাকে। তাদের কর্মক্ষমতাও কমছে কেবল এই কারণে। শ্রমিকদের ডরমেটরি করার জন্য আমরা অনেক আগে থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি সরকারের কাছে। শ্রমিকদের ফ্রি থাকার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন নেই। শ্রমিকরা টাকা দিয়েই থাকবে কিন্তু একটি স্বাস্থ্যসম্মত ডরমেটরি প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগই হবে মুখ্য। কারণ সব মালিকের পক্ষে ডরমেটরি নির্মাণ করে দেওয়া সম্ভব নয়, বাস্তবসম্মতও নয়। তাই সরকারকেই শ্রমিকদের জন্য এ বিষয়ে ইতিবাচক কিছু একটা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
ইউএম/জেএম