আট বছর বয়সেই এ ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় হাতেখড়ি আরিফের। অথচ হাত ফসকে যেকোনো সময়ই ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।
আরিফের মতো দেশের হাজারো শিশু অভাবের তাড়নায় লেগুনার হেলপার, নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক, কলকারখানা, লেদ কারখানা, পরিবহন, লোহা ঝালাইয়ের কাজ, ওর্য়াকশপ ও গৃহশ্রমিকসহ নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত। শিশু শ্রম বেআইনি হলেও স্বল্প মজুরিতে এবং নিজেদের স্বার্থে এক শ্রেণীর মালিক আরিফের মতো শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রাখছে।
আবার পূর্ণ ঘণ্টা কাজ করলেও মজুরি ও কর্মঘণ্টা নিয়েও নির্যাতিত হচ্ছে এই শিশু শ্রমিকরা। কেউ কেউ সারাদিন কাজ করলেও শুধু তিনবেলা খাওয়া ছাড়া কোনো মজুরি পায় না। শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিলেও পাওনার ক্ষেত্রে হচ্ছে পুরোপুরি উপেক্ষিত। এক্ষেত্রে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় শ্রম সংগঠনগুলোকেও পাশে পায় না শ্রমিক শিশুরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, দারিদ্র্যের কারণে দেশে প্রায় ৬০ লাখ শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। দেশে ৪৫ লাখেরও বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। এর মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে প্রায় ১৭ লাখ।
সিলভার কারখানায় রঙের কাজ করে আহসান (১১)। ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করে সে। এই পুরো সময়টা কেমিক্যাল আর রঙে মাখা থাকে তার পুরো শরীর। যা তার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নিঃসন্দেহে।
আহসান বলে, গরিব-গো জীবন এমনেই চলে। কাম-কাজ না করলে খাওয়াইবো কে? কাম বন্ধ, খাওন বন্ধ।
২০০১ সালে সরকার ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১৮২ নম্বর সনদ অনুমোদন করে। এছাড়া বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩৯ (১) ও ৪০ ধারা অনুযায়ী কোনো বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবে বহু শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। সেইসঙ্গে এই শিশুরা পাচ্ছে না ন্যূনতম কাজের পরিবেশ ও ন্যায্য মজুরিও।
কাজীপাড়া থেকে মোহাম্মদপুর রুটে লেগুনার হেলপারের কাজ করে সুমন। সারাদিন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকদের মতো কাজ করলেও ১০০ থেকে ১৫০ মজুরি পায় সে। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক একজন শ্রমিক পান দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
সুমন বলে, ইচ্ছা আছিল পড়ালেখা করবো, কিন্তু হয় নাই। আব্বা রিকশা চালায়। আরও তিন ভাই-বোন আছে। এ কারণে কামে লাইগ্যা পড়ছি।
শিশু শ্রমের বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, কম মজুরি দেবে বলেই শিশুদের কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও শিশু শ্রম বলতে কোনো টার্ম নেই। শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োগ দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরও আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অভাবের তাড়নায় অনেক শিশু বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জড়িয়ে পড়ে।
শিশু শ্রমরোধ করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
এমসি/আরআর/এইচএ