মহান মে দিবসের আগের দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ইটভাটা শ্রমিক ফুলতারা বেগম (৫০)।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ‘আলিফ ব্রিকস’ ইটভাটায় ফুলতারাসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়।
‘জেনেই বা কতটুকু লাভ হবে?’ এমন প্রশ্ন করেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ গ্রামের সিরাজুল হকের স্ত্রী ফুলতারা বেগম।
১৮৫ টাকা দৈনিক মজুরিতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করেন তিনি। ইটভাটায় কাঁচা ইট পোড়ানোর জন্য ভ্যানে ভর্তি করে চুলা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াই তার কাজ। এভাবেই চলছে তার জীবন।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাহুলী এলাকার কামরুল সরদারের স্ত্রী মাছুরা বেগম (২৫)। পারিবারিক অভাব মোচনের জন্য স্বামীর সঙ্গে ইটভাটায় কাজ করতে মানিকগঞ্জে এসেছেন তিনি। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই এক ইটভাটাতে কাজ করেন। সপ্তাহ শেষে স্বামী কাজের মজুরি পান আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। আর একই কাজ করে দৈনিক তিনি পান মাত্র ১৮৫ টাকা।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কচুয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে সুমন মিয়া (২৫) জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইটভাটায় ভ্যানে করে কাঁচা ইট চুল্লী পর্যন্ত নেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি। এরপর ইটভাটার অস্থায়ী ঘরে চলে যান। সন্ধ্যা নামতেই ঘুমিয়ে পড়েন। আবার ভোরে যোগ দেন কাজে। শ্রমিক দিবস সম্পর্কে ধারণা নেই তারও।
ফুলতারা বেগম, মাছুরা বেগম এবং সুমন মিয়ার মতো আরও শতাধিক শ্রমিক একই ইটভাটার বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। ইটভাটার মাটি প্রক্রিয়াজাত থেকে ইট তৈরির সব প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান অনায়াসে। যাদের প্রায় অধিকাংশের বেতন দৈনিক চার থেকে পাঁচ’শ টাকা। বছরের ৬-৭ মাস অনায়াসে কাজ করতে পারেন তারা। বাকি সময় করেন অন্য কাজ করেন।
এ শ্রমিকদের অধিকাংশই মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি। আবার কেউ প্রাথমিক। আবার কেউ কেউ বিদ্যালয়েই ভর্তি হননি। তাই ওই বেতনে ইটভাটার কাজে অনেক বেশি পরিশ্রম হলেও তেমন কোনো আপত্তি নেই তাদের। একই প্রতিষ্ঠানে সমান পরিশ্রমে পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের বেতন অর্ধেক। এরপরও আপত্তি নেই অধিকাংশ নারী শ্রমিকের!
আলিফ ব্রিকস’র স্বত্বাধিকারী খবিরুল আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, এ মৌসুমে তার ইটভাটায় প্রায় দেড়শ শ্রমিক রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২০-২৫ জন নারী শ্রমিক আছেন।
বেতন বৈষম্যের বিষয়টি জানতে চাইলে অন্যদের চেয়ে তার ভাটায় বেতনের পরিমাণ বেশি বলে দাবি করেন খবিরুল আলম চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
আরআর/এইচএ/এইচএ