ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

শ্রমিক দিবস বুঝি না, ন্যায্য মজুরি চাই

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৭ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৭
শ্রমিক দিবস বুঝি না, ন্যায্য মজুরি চাই নিরাপত্তাকর্মী শচীন দেবনাথ/ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করছেন শচীন দেবনাথ। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান যাই হোক প্রতিদিন ডিউটি করতে হয় ১২ ঘণ্টা। বিনিময়ে মাস শেষে হাতে পান ঘাম ঝরানো অর্থ।

সোমবার মে দিবসের সকালে নির্মাধীন ফ্লাইওভারের নিচে কর্তব্যরত অবস্থায় কথা হয় শচীন দেবনাথের সঙ্গে।
 
তিন বছর চার মাস ধরে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করছেন শচীন।

প্রতিদিন ১২ ঘণ্টার ডিউটি। মাসে ৫/৭দিন ওভারটাইম করেন। অতিরিক্ত ডিউটি করলে মাস শেষে মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হয় আড়াই-তিন হাজার টাকা। কিন্তু ওভারটাইমসহ তাদের বেতন হওয়ার কথা ছিলো ১৫ হাজার টাকা। খাতায় লেখা আছে ১২ ঘণ্টা ডিউটিতে বেতন ১২ হাজার টাকা। কিন্তু কোম্পানি তাদের দেয় ৯ হাজার টাকা। ফলে শ্রমিক প্রতি তিন হাজার টাকা লুফে নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
 
শ্রমিক দিবস প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে শচীন দেবনাথ বলেন, শ্রমিক দিবস দিয়ে কী হবে যদি না কাজের সঠিক মূল্য না পাই? আগে ঘামের সঠিক মূল্য দিতে হবে।

পরিবারে স্ত্রীসহ শচীনের আছে এক ছেলে এক মেয়ে। তার ঘাম ঝরানো অর্থে পড়ালেখা করছে সন্তানরা। ছেলে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে বিএ অনার্স পড়ছে। আর মেয়ের পড়ালেখা প্রায় শেষের পথে। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন তিনি। কষ্টকে এখন আর কষ্ট মনে হয় না।

কিন্তু গরিবের ঘামের ন্যায্য মূল্য যারা দেয় না তারা কখনও ভালো থাকতে পারে না- বলে অভিশাপ দেন শচীন।
ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন এক নির্মাণ শ্রমিক/ছবি: জিএম মুজিবুর
একই ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ করেন সোহেল। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সাজীমাড়া গ্রামে। ২ বছর ধরে তিনি এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। কাজ করেন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা। মাস শেষে পান ১০ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, খাতায় লেখা তার বেতন আরও বেশি। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করছে।

কাজ করতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কোনো সহায়তা পান কিনা জানতে চাইলে সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, ২ বছর ধরে কাজ করছি। এর মধ্যে অনেকবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি। হাত ঝাঁঝরা হয়ে গেছে কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাননি। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয়। গরিবের ঘরে জন্ম আমাদের কি আর সুখ আছে? কিন্তু যারা আমাদের শরীরের ঘাম ঝরিয়ে ন্যায্য ‍মূল্য দেয় না।
 
শেরপুরের মো. শহিদুল্লাহ। একই ফ্লাইওভারের নির্মাণ শ্রমিক। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ঝড়-বৃষ্টি বুঝি না। কাম না করলে পেটে ভাত যাবে না। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করি। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে তারও কোনো নিশ্চিয়তা নেই। এত কিছুর পরও কোম্পানি আমাদের সঠিক মজুরি দেয় না। ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে ১০-১২ হাজার টাকা বেতন পাই। শ্রমিকদের রক্তে ফ্লাইওভার নির্মাণ হচ্ছে, কিন্তু শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। আমরা তো আর মানুষ না।

শ্রমিক দিবসে একরাশ হতাশা আর রাগ-ক্ষোভ নিয়ে শহিদুল্লাহ বলেন, শ্রমিক দিবস বুঝি না ন্যায্য মজুরি চায়।

শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেয়া হয় কিনা জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলামের ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
এসজে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।