আর পাঁচটা মানুষের মতো পরিবার-পরিজনের দায়িত্ব রয়েছে তারও। লুৎফা বেগমের সাথে বিয়ে হয়েছে ৮ বছর আগে, সেই সংসারে রয়েছে মারিয়া ইসলাম নামে এক কন্যাশিশু।
সোহাগের সাথেই একই বাড়িতে থাকেন তার মা, একমাত্র ছোট বোন ও নানী। এদের সবার মধ্যমণি প্রতিবন্ধী সোহাগের আয়ের ওপর নির্ভর করেই চলতে হয় দুই সংসারের ৬ সদস্যকে।
সোহাগ প্রতিবন্ধী হলেও রোজগারের জন্য অদম্য চেষ্টা আর ইচ্ছের জোরে বরিশাল নগরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেড়ান ব্যাটারি চালিত রিকশা চালিয়ে।
অনেকে তাকে সড়কে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকেন, আবার অনেক চেপে বসে তার রিকশাতেই ঘুরে বেড়ান নগরজুড়ে। তবে এর বিপরীত চিত্রও ঘটে, দুর্ঘটনা হওয়ার ভয়ে অনেকেই এড়িয়ে যান তাকে।
এসব নিয়ে অনুযোগ নেই সোহাগের, কথা বলতে বলতে হয়তো আপনাকে চা খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন তিনি নিজেই। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন সোহাগ। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মো. শহীদ ও আলেয়া বেগম দম্পতির সন্তান তিনি। ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার বড়ো তিনি। বাবা বহু আগে তাদের ছেড়ে অন্য জায়গায় ঘর-সংসার শুরু করেন। আর মা এক কিন্ডারগার্ডেনে আয়ার চাকরি করে ৪ সন্তানকে নিয়ে কোনো রকমে চলতেন।
জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও বড় ছেলে হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব কাঁধে চলে আসে বহু আগেই। তবে সোহাগের ভাইদের আজ আলাদা সংসার রয়েছে। তবে নগরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মদিনা মসজিদের পাশেই মর্জিনা মঞ্জিলে একটি ঘরে মায়ের সাথে অনার্স পড়ুয়া বোন শিল্পী ও নানী ফুলবানু থাকেন, আর অপর একটি ঘরে সোহাগ থাকেন স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে। মায়ের চাকরি থাকলেও দুই সংসারের সার্বিক খরচের আয়ের উৎস সোহাগ।
মায়ের অবদানের কথা স্মরণ করে বাংলানিউজকে সোহাগ বলেন, পরিবার ৬ জনকে আজ আমার চালাতে হলেও আমি মায়ের কাছে ঋণী, বাবা ফেলে গেলেও মা আমাকে ফেলে দেয়নি। আর এখন ভাই-বোন, স্ত্রী সন্তান সবার ভালোবাসা নিয়ে ভালো আছি।
সোহাগ বলেন, আজ পহেলা মে হয়তো সকালে রিকশা চালাবো না, তবে বিকেলে চালাতে হবে। এ রিকশা আমার আয়ের উৎস, পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ভাতাও পাচ্ছি। সবসময় নিজে কিছু করতে চেয়েছি, ইচ্ছে ছিলো ওয়ার্কশপ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর, কিন্তু নানান প্রতিবন্ধকতায় তা হয়নি।
জেলা প্রশাসক ড. গাজী মৱ সাইফুজ্জামান স্যার ৫০ হাজার টাকা জুটিয়ে দিয়েছেন, তার সে টাকা দিয়ে ওয়ার্কশপ দিয়েও না পেরে মালামাল বিক্রি করে চলে এসেছি। শেষমেষ ৪৫ হাজার টাকায় এই রিকশা বানিয়েছি গত বছর। অনেকে চাকরিও দিয়েছিলেন, বেতনের চেয়ে কষ্ট বেশি করাতো তাই তাও ছেড়ে দিয়েছি।
আমার পা দিয়ে তো আর প্যাডেল রিকশা চালাতে পারবো না তাই ব্যাটারি চালিত রিকশা চালাই। পা ঠিক করার জন্য গেছিলাম, কিন্তু যেটুকু রয়েছে সেটুকুও কেটে ফেলার ভয়ে আর করিনি।
প্রতিবন্ধী স্বামীর মানসিক জোর ও অদম্য পরিশ্রমে সংসারে সুখেই আছেন বলে জানান স্ত্রী লুৎফা বেগম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
এমএস/এমজেএফ