ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আমাগোরে কোনো ছুটি নাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৭
আমাগোরে কোনো ছুটি নাই    আমাগোরে কোনো ছুটি নাই

সিরাজগঞ্জ: ‘আমরা কোনো মে দিবস-টিবস বুঝি না’-কাম না কইরল্যে সংসার চইলবো না। সারাদিন কাম কইর্যা যা আয় অইবো তাই দিয়্যাই কাইলক্যার জন্য বাজার কইরতে অইবো।

সোমবার (১ মে) দুপুরের দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের চালপট্টি এলাকায় একশ’ কেজি ওজনের চালের বস্তা মাথায় নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কুলি মঈন উদ্দিন। পাশের দোকানে বসে থাকা ছোলেমান, নুর ইসলাম, মঈন উদ্দিন, বিষ্ণুপদ ও গনজের আলীসহ প্রায় ১০-১৫ জন লোড-আনলোড শ্রমিক বলেন, আমাগোরে একদিন ছুটি নিলে সেদিন বাজার করা অইবো না।

বউ-পোলাপানেক খাইতেও দিবার পারবো না। তাই আমাগোরে কোনো ছুটি নাই।  

মে দিবসে যদিও বেশিরভাগ চালের আড়ৎ বন্ধ তবুও তারা কাজের সন্ধানে এসেছেন এখানে। চালের বস্তা প্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে মজুরি নিয়ে সারাদিনে যা রোজগার হয় তা দিয়েই পরদিনের জন্য বাজার করবেন তারা।

সিরাজগঞ্জ লোড-আনলোড কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু শেখ বাংলানিউজকে জানান, লোড-আনলোড কুলি শ্রমিকরা ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শ্রম বিক্রি করে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা রোজগার করে সংসার চালান।

শহরের বাজার স্টেশন স্বাধীনতা স্কয়ার চত্বরে চলছিল মোটর শ্রমিকদের সমাবেশ। ঠিক তার উল্টোদিকেই কাঁধে ঝুড়ি নিয়ে শাক-সবজি ফেরি করছেন সত্তর বছরের বিশা মুন্সী। তিনি মে দিবস বোঝেন না। প্রতিদিন ভোরে রেল লাইনের ধার থেকে শাকপাতা তুলে এনে শহরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

আমাগোরে কোনো ছুটি নাই

বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর থেকে আসা ভ্যান শ্রমিক ইব্রাহিম, শহরের দত্তবাড়ীর রিকশাচালক আব্দুল কাদের, শিয়ালকোলের আশরাফ আলী, সদর উপজেলার জগতগাঁতী গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী হবিবর, শিবনাথপুরের ছাকাত আলীসহ অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ দারিদ্রের কারণে মে দিবসে ছুটি কাটান না।

হতদরিদ্র এসব শ্রমজীবী মানুষ জানান, প্রতিদিনই কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়াতে হয় তাদের। দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিকদের ছুটি কাটালে চলে না। কেউ কেউ শুধুমাত্র ঈদের দিন ছুটি কাটান, আবার সেদিন বাড়তি কিছু আয়ের আশায় কাজে যান তারা।

মে দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা জানি, মে দিবসে বাস-ট্রাক বন্ধ থাকে। কিন্তু আমরা কাম না কইরলে তো পেটে ভাত ঢুইকপো না। তাই আমাগোরে কোনো ছুটি নাই।  

সিরাজগঞ্জে বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া জেলা বাসদের আহ্বায়ক নব কুমার কর্মকার বাংলানিউজকে জানান, মে দিবসটি শ্রমিকদের জন্য। এ দিন সব শ্রমিকেরই ছুটি পাওয়া উচিত। কিন্তু অনেক শ্রমিকই ছুটি কাটাতে চান না।   কারণ তাদের দিন রোজগার করে দিন খেতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।