তাদের কাছে দিবসটির তাৎপর্য বলতে সারা দিন ছুটির আমেজ। বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা।
উল্টো পরদিন আবারও কর্মদিবস হবে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টার। ফলে মে দিবসের কথা তুলতেই রাগতস্বরে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের ট্রাক চালক মনসুর মিয়া (৩৫) বললেন, চালকদের কাজ হচ্ছে মহাজনের গোলামি করা! আমাদের কাজের কোনো সময়সীমা নাই। দেশের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে হয়। শ্রমিক দিবসে আমাদের কোনো লাভ নেই।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামাড়ার ১২ মাইল নামক স্থানে রোববার (৩০ এপ্রিল) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে আলাপ হচ্ছিল তাদের সঙ্গে। চা দোকানি বাবু মিয়া শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় মে দিবসকে অর্থহীন বলেই মনে করেন।
তার ভাষ্যে- এখনো দেশে বেশিরভাগ শ্রমিক নিগৃহীত, প্রতারিত ও অবহেলিত হচ্ছে। সেদিকে কারো কোনো নজর নেই। শুধু মে দিবস এলেই যতো হাঁকডাক।
ট্রাক চালক সুজন জানালেন, প্রায় এক যুগ যাবত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সংসার চালালেও তাদের ভূমিকা কোথাও দৃষ্টান্ত হয়নি। দিন-রাত পরিশ্রমের পরেও পায়নি মানবতার ছোঁয়া। বরং অমানবিকভাবেই হয়েছে শ্রম বৈষম্যের শিকার। মালিকের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে চাকরি। মন চাইলেই আমাদের বিদায় করে দেওয়া হয়।
শ্রমিক দিবসের সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে যারা কথা বলেন তাদের দৃষ্টিতে আসেন না সুজন বা খায়রুলের মতো প্রান্তিক মোটর শ্রমিকরা। ফলে আড়ালেই থেকে যাচ্ছে তাদের ভাগ্যোন্নয়ন।
শ্রমিক দিবস কী, জানেন এটা? প্রশ্ন করতেই যেন আবার মুখ খুললেন চালক খায়রুল। বলতে থাকেন, ‘আমরা এইসব দিবস-টিবস বুঝি না। দিবসের দিন কোনো কাজ নাই। পরদিন আবার ১৮ ঘণ্টা ডিউটি। যতদিন বাইচ্যা থাকমু এ কাজ করেই জীবন চালাতে হবে। ’
তারা বলছিলেন, মোটর শ্রমিকরা আজ এ গাড়িতে, কাল ওই গাড়িতে। তাদের চাকরির কোনো গ্যারান্টি নেই। শ্রমিক নেতারাও তাদের স্বার্থ দেখেন না।
শ্রমিক দিবসে গেঞ্জি, মাথার ব্যান্ড আর ফেস্টুন দিয়ে তাদেরই রাস্তায় নামিয়ে দেয়। ৮ ঘণ্টার কর্ম সময়ও যেন তাদের কাছে অধরা এক স্বপ্ন!
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
এমএএএম/এমজেএফ