কৌতূহল নিয়ে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে পূর্বদিকের এক পাশে দেখা গেলো কালো দড়ি দিয়ে ঘেরা ফুট বিশেক জায়গা। এটা নাকি মানবখাঁচা।

একটু এগিয়ে দেখা গেলো সেই খাকি আর সাদা পরা মানুষগুলোর জটলা। সামনে কয়েকজন নারী-পুরুষ অসহায় ভয়ার্তত চোখে দাঁড়ানো। কেউ বিনা টিকিটে প্ল্যাটফর্মে ঢুকেছেন, কেউ টিটিকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে ফিরছেন ঢাকায়। সাদা পোশাকের রশিদ কাটতে থাকা লোকটির কোনোদিকে তাকানোর সময় নেই। জরিমানা কাটতে ব্যস্ত। যাত্রাপথ যতো দূর বা কাছেই হোক জরিমানা সাড়ে ৩শ টাকা। এমনটিই জানাচ্ছিলেন পাশে দাঁড়ানো আরএনবি সদস্য জাকির হোসেন। বৃহস্পতিবার কতজনের জরিমানা কাটা হয়েছে জিজ্ঞাস করলে বলেন, কতজন তার হিসাব নেই।

আরএনবি সদস্য নবী এখানে দায়িত্ব পালন করছেন আড়াই বছর। তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, এটা নিয়মিত না। বৃহস্পতিবার এলে চেক বাড়ে। এদিন যাত্রী বেশি থাকে। তাই চেকিংও বেশি।
মানবখাঁচা নিয়ে বলেন, এটা করা হয়েছে ভয় আর সম্মানে আঘাত দেওয়ার জন্য। এখানে রাখলে সবাই তাকিয়ে দেখে। পরে যেন মান সম্মানের ভয়ে সবাই টিকিট কেটে ঢোকে বা রেলভ্রমণ করে সেজন্যই এ ব্যবস্থা। কিছুক্ষণ সেখানে রেখে জরিমানা আদায় হয়ে গেলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কথা বলতে বলতেই চলে এলো কালনী। এসিতে সিট মেলেনি। শোভন চেয়ারের বগিতে ঠাঁসাগাদা লোক। সিটে বসতেই বোঝা গেলো দাঁড়িয়ে থাকা লোকের সংখ্যা কম নয়। এরইমধ্যে বগির অ্যাটেনডেন্টের সঙ্গে এক যাত্রীর আলাপচারিতা কানে এলো। তাদের কথা হচ্ছিলো তাদেরকে সামান্য টাকা দিয়ে যাত্রী ওঠানো নিয়ে।

কথা বলছিলেন ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ এনামুল হোসেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন বিনা টিকিটে যাত্রী নিয়ে হয়রানিতে ফেলবেন না। অ্যাটেনডেন্টের জবাব, আমরা তো সুযোগ পেলে বসিয়ে আনি। চেষ্টা করি লুকিয়ে বের করে দেওয়ার। সরল স্বীকারোক্তি তার।
এনামুল দেখালেন তার টিকিট। নিজে আজমপুর পর্যন্ত ১৩৫ টাকার টিকিট কেটেছেন ১৮০ টাকা দিয়ে। তার বক্তব্য, জরিমানা নিতে তাদের এতো আগ্রহ কারণ এ টাকার ভাগ তারা পায়। সরকারের খাতে যায় না। আরএনবি সদস্যরা চেক নিয়মিত হয় না বললেও এই ব্যক্তির বক্তব্য চেক নিয়মিত হয় এবং ব্যাপকভাবে অবৈধ টাকা রোজগার করছে রেলকর্মীরা।
নিয়মিত কেন চেক হয় না তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য নেই আরএনবি কিংবা টিটিদের। পকেট ভারী হলেই তারা খুশি। অপরাধের ভাগিদারও যাত্রীরা, ভোগান্তিও তাদের।
আর পর্যটন নগরী সিলেটে কালনীর মতো লক্কড়ঝক্কড় মার্কা ট্রেন কেন এখনও রাখা হয়েছে এবং কেন পারাবতের মতো সব লাল-সবুজ ট্রেন পাচ্ছে না তা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই যাত্রীদের। পারাবতের মতো ট্রেনেই অভ্যস্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। সেবার মান বাড়বে কবে, আর অযথা হয়রানিই বা কবে কমবে তা নিয়ে যতো প্রশ্ন।

কালনীর প্রতিটি সিটে লেখা ‘আপনার আস্থাই আমাদের প্রেরণা’। এখন আস্থা আর প্রেরণার হিসাব মেলানোর পালা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৭
এএ