ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম স্বীকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৭
হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম স্বীকার

ঢাকা: সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষাকারী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে এবং তাদের গাফিলতার কারণেই এতোবড় ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করেছে পাউবো মহাপরিচালকসহ সাত কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার (০৪ মে) দুপুরে দুদকের পরিচালক বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদেই তারা অনিয়মের কথা দুদকের কাছে স্বীকার করেছেন।


 
পাউবোর কর্মকর্তারা অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক (ডিজি) মুনীর চৌধুরী।
 
দুদক যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা হলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর কবির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল হাই বাকী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হারুনর রশীদ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খলিলুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন।
 
পাউবোর কর্মকর্তা অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন জানিয়ে দুদকের মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এবং হাওরাঞ্চলের কাছে তাদের গাফিলতি ছিলো। যার জন্য এ ক্ষতি হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। একথা পাউবোর মহাপরিচালক থেকে শুরু করে সবাই স্বীকার করেছেন।
 
তিনি আরও বলেন,পাউবো’র কর্মকর্তা হাওরের বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে সেটা স্বীকার করেছেন। তবে তারা যে এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সেটা বলা যাবে না। দুদক তাদের শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এখন বিষয়টি নিয়ে আরও অনুসন্ধান করা হবে। পরেই বলা যাবে কে দুর্নীতিবাজ। আর যারাই দুর্নীতি করুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে এমনটা ভাবার অবকাশ নেই।
 
এছাড়া গত মাসের শুরুতে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা তলিয়ে যায়। দুর্বল ও অসমাপ্ত বাঁধ ভেঙে প্লাবন ও ফসলহানির পেছনে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে।
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, হাওরাঞ্চলের ছয় জেলায় মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলের বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজের সঙ্গে যুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তিন প্রকৌশলীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ‘সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষাবাঁধে ভাঙন’ শীর্ষক একটি সংবাদ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এর দৃষ্টগোচর হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এবিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি প্রতিবেদন চাওয়ার জন্য কমিশনের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত অনুবিভাগকে নির্দেশ দেন।
 
তার পরিপ্রেক্ষিতে দুদক সচিব এ বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চেয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে চিঠি পাঠান। এ পত্রে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন কমিশনে পাঠানো জন্য অনুরোধ করা হয়। কমিশন বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যোগাযোগ করা সত্ত্বেও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় ১ বছর পর ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ মাসের শেষ দিকে প্রতিবেদনটি কমিশনে পাঠায়। মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদনে কোনো প্রকার মতামত, বিশ্লেষণ কিংবা সুপারিশ না করে পোস্ট অফিসের মতো কমিশনে প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছে। আর প্রতিবেদনে বাঁধ ভাঙার কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক কারণকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ফলে দুদক এ প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৭
এসজে/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।