ঢাকা, বুধবার, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

পাটুরিয়া ঘাটে এক হাজার টাকায় ভিআইপি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৮ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
পাটুরিয়া ঘাটে এক হাজার টাকায় ভিআইপি এক হাজার টাকায় ভিআইপি / ছবি: দীপু মালাকার

পাটুরিয়া থেকে ফিরে: রাত তিনটা। দুই পারে গাড়ির লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এমন সময় ফেরি পারাপারে ব্যস্ততা থাকার কথা। 

কিন্তু দেখা গেলো, দৌলতিয়ার তিন নম্বর ঘাটে এসে ভিড়ল ফেরি এনায়েতপুরী। এই ঘাটের পন্টুনে ওঠা-নামার পথটি অনেক ঢালু ও সরু।

পথটিতে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ট্রাক লাইন ধরে ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে।  
 
স্বাভাবিকভাবে পন্টুনে ওঠা-নামার রাস্তায় কোনো যানবাহনকে পার্কিং বা দাঁড় করাতে দেওয়া হয় না। উপরে অ্যাপ্রোচ রোডে লাইন করে রাখা হয় যানবাহনগুলোকে যেনো ফেরি তীরে ভেড়ার পর দ্রুত নেমে যেতে পারে।  প্রথমে আনলোড, এরপর উপর থেকে গাড়ি ছাড়া হয় ফেরিতে ওঠার জন্য।  
 
আর তখন এক লাইনে দ্রুতই ফেরিতে উঠে যেতে পারে যানবাহনগুলো। এই পদ্ধতি পরীক্ষিত এবং সফল একটি পদ্ধতি বলে গণ্য করা হয়। দৌলতিয়া ঘাটেও চালু রয়েছে। কিন্তু শনিবার (০৬ মে)  দিনগত মধ্যরাতে কেন সেই নিয়ম মানা হলো না, এর যুতসই কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া গেলো না।
 
পন্টুনে ওঠার সরু রাস্তাটিতে আগে থেকেই ট্রাক প্রবেশ করিয়ে রাখায় প্রত্যেকটি গাড়িকে নামতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হলো। মিনি ট্রাকগুলো সহজে নামতে পারলেও থেমে থেমে নামতে হলো নৈশকোচ ও বড় ট্রাকগুলোকে।

এক হাজার টাকায় ভিআইপি
 
যেখানে ৩০ মিনিটে আনলোড হয় একটি রোরো ফেরি কিন্তু এনয়েতপুরী (রোরো ফেরি) আনলোড হতে সময় নিলো প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের মতো। আনলোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পন্টুনের পথবন্ধ করে দাঁড়িয়ে ‍থাকা ৫টি ট্রাক হৈ হৈ করে উঠে গেলো ফেরিতে।  
 
এরপর বেশ কয়েক মিনিট যায় কিন্তু উপর থেকে গাড়ি ছাড়া হয় না। বেশ কয়েক মিনিট পরে একটি একটি করে বাস এসে ফেরিতে উঠলো। পুরো লোড হওয়ার পর দ্রুত ছাড়ার কথা। কিন্তু র‌্যাম তুলতেও ঢিলেমি লক্ষ্যণীয়। এরপর র‌্যাম তোলার মিনিট দশেক পরে স্টার্ট দিলেন চালক।
 
ফেরী পারাপারে নৈশকোচগুলো অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা কিন্তু একটি বিশাল চক্র রয়েছে যারা ট্রাক তোলায় অনেক বেশি আগ্রহী।  
 
দুলু মিয়া নামে এক পিকআপ চালক জানান, বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। কথায় আছে না, যতো গুড় ততো মিষ্টি। তেমনি যতো টাকা দেবেন তেমন সেবা পাবেন। এক হাজার টাকা দিলে আপনাকে ভিআইপি বানাবে। আর ট্রাক পার করতে হলে টাকা না দিলে সারাদিন বসে থেকেও পার হতে পারবেন না।  
 
‘আর যদি টাকা দেন তাহলে রড বোঝাই ট্রাক হয়ে যাবে সবজির গাড়ি। মাইক্রোবাস হয়ে যায় রোগীর অ্যাম্বুলেন্স। ’ 
 
কয়েকটি পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেলো, ফেরি ফাঁকা কিন্তু উপর থেকে যানবাহন ছাড়া হচ্ছে না। অনেকক্ষণ পর পর ছাড়া হচ্ছে। ট্রাক তুলে না হয় টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু অযথা বিলম্ব করার কারণ খুজতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা!
 
যানজট হলেই চালকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তখন ঘুষ আদায় করতে সহজ হয়। আর এ কারণে অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয় বলে সামছুল আলম নামে এক চালক অভিযোগ দিলেন।  
 
সাত বছর ধরে পিকআপ চালান হাসান মিয়া। কোনোদিনই পাটুরিয়া ঘাটে ন্যায্য ভাড়ায় ফেরি পার হতে পারেননি। ভাড়া দিতে হয়েছে দ্বিগুণ পর্যন্ত। অনেক অভিযোগ দিয়েছেন কিন্তু  কোনো কাজ হয়নি।  

শনিবার রাতে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা যাচ্ছেন, ফেরি এনায়েতপুরীতে বসেই আলাপ হয় তার সঙ্গে। তার মতো আরও অনেক চালকের একই অভিযোগ, কোনোদিন সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে ফেরি পার হতে পারেননি।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৭
এসআই/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।