ঢাকা, বুধবার, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রাকের কাগজ জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ, ছাড়ায় দালাল

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৪ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
ট্রাকের কাগজ জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ, ছাড়ায় দালাল ট্রাকের কাগজ জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ, ছাড়ায় দালাল/ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: মহাসড়কে অনেকটা সমান্তরাল রেখা টেনে দিয়েছে গাড়ির দু’টি সারি। প্রায় আধা কিলোমিটার লম্বা সেই সারির লেজ গিয়ে ঠেকেছে বাস টার্মিনালের মোড় অব্দি। বাঁ পাশের সারিতে একটা পেছনে আরেকটা বাস। আর ডান পাশে ট্রাক বা মালামাল পরিবহনের গাড়ি। এক সারির গাড়ি, অন্য সারিতে যেতে মানা।

এভাবেই সামনের গাড়িগুলো একটু একটু করে এগিয়ে যায় ঘাটের দিকে। ঢাকা মেট্রো ড-১৪৬১৯৭ গাড়িটি যখনই সামনে এগোতে যায়, চলে আসে এক বিশাল গর্ত।

চালক নুরে আলম তাই একটু বাঁ দিকে টার্ন নিয়ে নিজের সারি বজায় রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন।
 
সব চেষ্টাকেই থামিয়ে দিয়ে কোত্থেকে যেন সাই করে এসে দাঁড়ায় ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা রুহুল আমিনের বাইক। তিনি দ্রুত বেগে মোটরসাইকেল থেকে থেমেই ‍নুরে আলমকে বকতে থাকেন অশ্রাব্য ভাষায়। ‘কাগজ দে’ বলে ধমকও দেন। নুরে আলম বোঝানোর চেষ্টা করেন প্রকৃত বিষয়। এ সময় ট্রাকের জানালা গলে হাতটা বেরিয়ে এলে তাতে জোরে আঘাত করে আবার ধমকের স্বরে বলে ওঠেন রুহুল আমিন-এতো কথা বলিস কেন? গাড়ির কাগজ দে।
 
তাদের এই কথোপকোথনে ইতিমধ্যে সামনে আটকে থাকা অন্য গাড়ির হেলপার, ড্রাইভারসহ উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। এদিকে রুহুল আমিনকে হুমকি-ধামকি চলছেই। অবশেষে লাইসেন্সসহ গাড়ির আনুষাঙ্গিক কাগজ বের করে দেন নুরে আলম।
ট্রাকের কাগজ জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ, ছাড়ায় দালাল/ছবি: দীপু মালাকার
একই অবস্থা হয় পেছনে থাকা ট্রাকের চালক জীবনেরও। তার কাছ থেকেও একই ‍কায়দায় কাগজ নিয়ে যাওয়া হয়।
 
যে ঘটনার বর্ণনা এতোক্ষণ দেওয়া হলো, সেটা রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটের চিত্র। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরাতেই ঘটে এখানে। ঢাকাগামী ট্রাক-লরির চালকরা অবশ্য অনেক আগেই বিষয়টিতে অভ্যস্তই হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে এটা যেন অনেকটা নিয়মেই পরিণত হয়েছে।
 
শনিবার (৬ মে) দিনগত রাতভর অবস্থান নিয়ে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশ হঠাৎ কোনো গাড়ির সামনে দাঁড়ায়, আর কাগজ-পত্র সব নিয়ে চলে যায়। তবে গাড়ি আটকায় না।
 
বিষয়টি নিয়ে বেশকিছু গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, ট্রাফিকরা কাগজ রেখে গাড়ি ছেড়ে দেয়। আর কাগজ ছাড়িয়ে আনেন, তাদের মালিকদের নিয়োজিত দালালরা। মূলত কাগজ জব্দ করার বিষয়টি এখন বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। কেননা, কাগজ রেখে ট্রাক ‍বা গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। আর পরিবহনকরা মালামালের গুরুত্ব বুঝে আদায় করা হয় অর্থ।
 
নুরে আলম পেঁয়াজ বোঝাই গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন ময়মনসিংহে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অযথাই মাঝে মধ্যে এমন হয়। কোনো অজুহাত পেলেই কাগজ আটকে রাখে। গাড়ি নিয়ে আমরা চলে যাই। পরবর্তীতে মালিকের লোক সেই কাগজ উদ্ধার করে।
 
ঢাকা মেট্রো ট-১৬৪৬৫৫, গাড়ি ছিল ডাব বোঝাই। এই গাড়ির ড্রাইভারের কাছ থেকে কাগজ নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা আর ফেরত দেওয়া হয়নি। গাড়ির চালক আসলাম আলী ফেরিতে গাড়ি তোলার পূর্ব মুহূর্তে বাংলানিউজকে বলেন, দেখি কী হয়। মালিকের লোক আছে। কোনো সমস্যা হবে না। কাগজ নিতে গেলে ট্রাফিক পুলিশকে কিছু দিতে হয়। আমাদের লোক আছে, ওরাই দেয়। পরে কাগজ-পত্রও ফেরত দেয়।
 
এদিকে ট্রাফিক পুলিশের এ কর্মকাণ্ডের কারণে ঘাটমুখী গাড়ির সারি আরো বড় হতে থাকে। জট লেগে যায় পেছনে। যা ভোগান্তির সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৭
ইইউডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।