ঢাকা, বুধবার, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

২৭ হাজার লোকের জন্য পাবলিক টয়লেট একটি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৩ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
২৭ হাজার লোকের জন্য পাবলিক টয়লেট একটি! পাটুরিয়া ঘাটের পাবলিক টয়লেট-ছবি-দীপু মালাকার

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট ঘুরে: দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ফেরি ও লঞ্চ যাতায়াতের প্রধান রুট পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত এই রুটে। দেশের অন্যতম ব্যস্ত নৌরুট হলেও এখানে নেই পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। যাও একটি আছে এর বেশিরভাগই থাকে তালাবদ্ধ। ফলে নারী, শিশুসহ যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রতিদিনই।

শনিবার (০৬ মে) দিনগত রাতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। রাত ৩টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে শ’ খানেক গাড়ির লাইন।

একেবারে পেছনের গাড়ি ঘাট থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে লাইনে অপেক্ষা করছে।

রোজিনা পরিবহনের যাত্রী যাদব প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ছুটোছুটি করছেন। টোল ঘরের কাছে গিয়ে পুলিশের কাছে জানতে চান, এই ঘাটে পাবলিক টয়লেট নেই? পুলিশের উত্তর, সামনের মোড়েই আছে। আর একটু হাঁটতে থাকেন। একদিকে প্রকৃতির ডাক অন্যদিকে গাড়ি হারানোর ভয়। তার দিশেহারা হওয়ার মতো অবস্থা।

একটু হাঁটছেন তো পেছনে আবার গাড়ি দেখছেন। না জানি এই রাতে গাড়ি হারিয়ে ফেলেন। এরপর পুলিশ তাকে জানায়, আপনি গাড়ির নম্বরটা মনে রেখে চলে যান। এর কিছুক্ষণ আগে মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলাকে দেখা যায় গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটি করতে। খুঁজছেন পাবলিক টয়লেট। প্রায় এক-দেড় কিলোমিটারের মধ্যে পাবলিক টয়লেট খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

পাটুরিয়া ঘাটের পাবলিক টয়লেট-ছবি-দীপু মালাকারদৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের দুই পাশে একই চিত্র। ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু বাড়িতে পাবলিক টয়লেট করা হয়েছে। কিন্তু সেটাও রাত ১২টার পর আর পাওয়া যায় না। যে কারণে যাত্রীদের হয় এক কিলোমিটার হেঁটে ঝুঁকি নিয়ে ফেরিতে যেতে হয়, না হয় রাস্তার ঢালেই প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয়।

পাটুরিয়া ঘাটের টোল ঘরের হিসেব অনুযায়ী, এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ বাস ও ৭০০-৮০০ ট্রাক পার হয়। ৫০ সিটের গাড়ি হলেও ৫০০ গাড়িতে ২৫ হাজার যাত্রী। আর ট্রাকে চালক হেলপারসহ তিনজন করে ধরলে ৮০০ ট্রাকে ২৪০০ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ২৭ হাজার ৪০০ লোক এই ঘটে চলাচল করে। আর এই সাড়ে ২৭ হাজার লোকের জন্য একটি মাত্র পাবলিক টয়লেট রয়েছে।

পাটুরিয়া ঘাটে সবেধন নীলমনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পাবলিক টয়লেট। মোট পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। ওই পাঁচটির মধ্যে দুটি সব সময় তালা দেওয়া থাকে।

এ বিষয়ে কেয়ারটেকার আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ঘাটে গাড়ি লাগলে (জ্যামে পড়লে) লোক আসে, না লাগলেই ফাঁকা বসে থাকতে হয়। যখন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় তখন রশিদদের পোয়াবারো। অন্যদিকে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।

বিআইডব্লিউটিএ’র আওতাধীন পাবলিক টয়লেট এমন জায়গায় নির্মাণ করা তাতে কারোরই চোখে পড়ার কথা নয়। একেবারে ঘাটের কাছেই এই টয়লেট।

দৌলতদিয়া ঘাটেও একই অবস্থা। মাইলের পর মাইল গাড়ির সারি। একমাত্র পাবলিক টয়লেটটি বাস টার্মিনালে। এছাড়া ৪-৫টি বাড়িতে ঘরোয়াভাবে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।

পাটুরিয়া ঘাটের পাবলিক টয়লেট-ছবি-দীপু মালাকারঅন্যদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে চলাচলকারী যেসব ফেরি রয়েছে তার প্রত্যেকটির টয়লেট এতো নোংরা যে নাকে রুমাল না দিয়ে প্রবেশ করার উপায় থাকে না। অনেক সময় মানুষের মলমূত্রে টয়লেটের কমোড ভর্তি থাকে। যা দেখলে যে কারোরই বমি চলে আসবে।

এই ঘাট দিয়ে পার হওয়ার আগে যাত্রীদের আগে চিন্তা করতে হবে। অন্যথায় মহাবিপদে পড়তে হবে। যাত্রীদের এই দুর্ভোগ প্রতিদিনের তারপরেও সংশ্লিষ্ট মহলের মনযোগ নেই এ দিকে। বিশেষ করে দুই ঈদে যখন কয়েক কিলোমিটার জ্যামে পড়ে থাকতে হয় তখন দুর্ভোগের সীমা থাকে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৭
এসএম/আরআর/এমজেএফ

**পাটুরিয়া ঘাটে এক হাজার টাকায় ভিআইপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।