দেশের প্রায় ৪ হাজার মাদক ব্যবসায়ীর নামের তালিকা দুদকে দেয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে দুদক প্রাথমিকভাবে ৩৬৫ জনকে বাছাই করে ১৭ জন বড় মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে।
অনুসন্ধানে নামার পর ওই ১৭ মাদক ব্যবসায়ীর কোনো ঠিকানা খুঁজে পায়নি কমিশন। তাই আগামী ১ মাসের মধ্যে তাদের ঠিকানাসহ নামের তালিকা দিতে এই আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
রোববার ( ৭মে) দুপুরে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে ‘মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসহ ও করণীয় শীর্ষক’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ আল্টিমেটাম দেন।
সেমিনারটির আয়োজন করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, নিয়ন্ত্রণহীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আমি তাদের এক মাসের সময় দিলাম। এই সময়ের মধ্যে যদি তারা নামের তালিকা ঠিকানাসহ না দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি ভাবতে পারি না একটি অধিদপ্তর কীভাবে এত বড় ভুল করতে পারে। একজনের ঠিকানা ভুল হতে পারে তবে সবার ঠিকানা কীভাবে ভুল হয়?
তিনি আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। যারা মাদক ব্যবসা করে তারা অবৈধ ব্যবসা করে। তাদের কালো টাকার পাহাড় আছে। আর সেজন্য তাদের সম্পদের হিসাব চাইতে আমরা বড় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করি। কিন্তু অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হলো সেটা স্মরণীয়। যা কখনও মেনে নেওয়া যায় না।
দুদক চেয়ারম্যান কিছু সুপারিশ রেখে বলেন, যারা ড্রাইভিং লাইসেন্সও নবায়ন করবে তাদের ড্রাগ পরীক্ষা করা যেতে পারে। তাহলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়া কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়ার সময়ও ড্রাগ পরীক্ষা করতে হবে। তাহলে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের জন্য আইন হওয়া প্রয়োজন। মাদক নিরাময় কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। অন্যদিকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে মাদক সরবরাহের অভিযোগও আছে। শুধু তাই নয়, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনেকেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই অভিযোগও অসত্য নয়। কিন্তু এসব ব্যবস্থার মধ্য থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এর পাশাপাশি অনেকটা দুর্বল মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তারাদের জনবলের ঘাটতিসহ বাজেট ঘাটতি আছে। এজন্য আমরা চেষ্টা করছি এই অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সালাউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের মধ্যে সমস্যা আছে সেটা আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু সবার সহযোগিতা পেলে আমরা অবশ্যই মাদক দূর করতে পারব। এজন্য প্রত্যেকের অবস্থান থেকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে।
দুদককে কেন ভুল ঠিকান দেওয়া হয়েছে সংবাদকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তখন ছিলাম না। আমি নতুন জয়েন করেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছে। দুদক চেয়ারম্যান যে এক মাসের সময় দিয়েছেন আশা করছি এরই মধ্যে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
সেমিনারে মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অপরূপ রতন চৌধুরী, গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী এলিজা ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদা রওনক খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, মে ০৭ ,২০১৭
এসজে/এমজেএফ