পরিবহন চালকদের অভিযোগ, ওই পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা দালালচক্র, ট্রাফিক পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসি’কেও বাড়তি চাঁদা দিতে বাধ্য হন তারা। ফলে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অনেক বেশি দিয়ে ফেরি পার হতে হয় তাদের।
শনিবার (০৬ মে) সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এ চক্রের হাতে অসহায় মাছ ও গরু ব্যবসায়ী এবং সবজি ও ফলের মতো পচনশীল পণ্য পরিবহনকারীরা। ভুক্তভোগীদের দাবি, চক্রটি দিনে ঘাট থেকে অবৈধভাবে লুটে নেয় অর্ধ কোটি টাকারও বেশি।
চালকদের অভিযোগ, এক টনের পিক-আপ বা মালবাহী ছোট গাড়ির ফেরি পারাপারে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৭৩০ টাকা। কিন্তু ফেরির টিকিট নিতে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই শীর্ষনেতার চাঁদা আদায়কারী মাসুদ ও সেলিমদের দিতে হয় বাড়তি ৩০০ টাকা। এ টাকা না দিলে টিকিট ও ফেরির সিরিয়াল মেলে না।
অন্যদিকে গরুবাহী ট্রাকের সরকারি ভাড়া এক হাজার ৬০ টাকা। কিন্তু অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিলেই কেবল মেলে ফেরির টিকিট। টিকিট কাউন্টারে দাড়িয়ে ওই নেতার চাচাতো ভাই ও উপজেলা যুবলীগের বড় নেতার নামে বাড়তি এ টাকা তোলেন আজাদ, নবীন, জানু, লাল মিয়া, কামালসহ আরো কয়েকজন।
কাঁচামালবাহী পাঁচ টনের বড় ট্রাকেরও নির্ধারিত ভাড়া এক হাজার ৬০ টাকা। এক্ষেত্রে টিকিট দিতে নেওয়া হয় বাড়তি ৩০০ টাকা। এ টাকার ১০০ টাকা ভাগ পান বিআইডব্লিউটিসি’র লোকেরা। বাকি ২০০ টাকা ভাগ করে নেন একই পরিবারের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ওই দুই নেতা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় থাকা গাড়িকে প্রথমেই দুই লাইনে ভাগ করা হয়। জরুরি লাইনে থাকে মাছের ট্রাক, গরুর ট্রাক, সবজি ও পচনশীল পণ্যের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস। অন্যদিকে ‘বাজে মাল’ লাইনে থাকে অপচনশীল (যে পণ্য ঘাটে কয়েকদিন আটকে থাকলেও নষ্ট হওয়ার নয়) পণ্যের গাড়ি।
চালকদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশ সিরিয়াল ব্রেক করে টাকার বিনিময়ে বাজে মালের ট্রাককে জরুরি লাইনে ঢুকিয়ে দেয় প্রকাশ্যেই। আবার ওভারটেকিংয়ের কথা বলে ফেরিঘাটের মুখেই ট্রাক চালকদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় গাড়ির কাগজপত্র। দেখানো হয় বড় ধরনের জরিমানা ও মামলার ভয়। কিন্তু পরে দালালের মাধ্যমে নগদ টাকায় রফা হয় এসব ঘটনার।
ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কুরিয়ার ও পার্শ্বেল সার্ভিস কোম্পানি, সিমেন্ট কারখানা, এলপিজি গ্যাস, পোল্ট্রি হ্যাচারি ও ফিড কোম্পানি, ওষুধসহ বিভিন্ন কোম্পানির কাভার্ড ভ্যান পারাপারে নিয়মিত মাসোহারা নেন। পরিবহন কোম্পানিগুলোও তাদের চেকারের মাধ্যমে নিয়মিত মাসোহারা দেয়। এ হিসাবের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলো পড়ে ট্রাফিক পুলিশের মামলাজটে।
এসব গাড়ি এর পাশাপাশি রাজনৈতিক চাঁদাও দিতে বাধ্য হয়। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ট্রাকপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে তোলেন ওই রাজনৈতিক পরিবারের বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয় আব্দুল হাই মোল্লা, টোকন ও মোস্তফা এবং ভাগিনা দৌলতদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুলহাস মোল্লাসহ অনেকে। প্রতিটি মাছের গাড়ি থেকেও বাড়তি ৫০০ টাকা করে আদায় করেন জুলহাস।
অন্য একটি দালালচক্র আরো ৩০০ টাকা নিয়ে যাত্রিবাহী পরিবহন আটকে রেখে ও সিরিয়াল ব্রেক করে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিক-আপ ফেরিতে তুলে দেয়। দৌলতদিয়া ও গোয়ালন্দ ইউনিয়নের স্থানীয় অর্ধ শতাধিক দালালের এ চক্রও আদায় করে লাখ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৭
আরএম/এএসআর