সব মিলিয়ে বনানী-এয়ারপোর্ট রোডের ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সাড়ে ৫ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)অধিদপ্তর।
এ সড়কে নিরাপত্তা দেওয়াল ও সবুজায়ন নিয়ে নানা মহলে বিভ্রান্তিমূলক কিছু অপপ্রচার চালানো হলেও কাজ আর একটু এগুলেই সব বিরোধিতা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশাবাদী সওজ কর্তারা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভেতরে হলেও এ সড়কের তত্ত্বাবধায়ক তারাই। মানে সড়ক ও জনপথ (সওজ)অধিদপ্তর। আর ভিআইপি রোড হওয়ায় এ সড়ক সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করার বাস্তবতাও নেই। তাই বনানী-এয়ারপোর্ট রোডের নিরাপত্তা ও সবুজায়নের উদ্যোগকে মডেল প্রকল্প হিসেবে নিয়ে প্রয়োজনে সারাদেশেই এমন সবুজ সড়ক গড়ে তোলার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেওয়ার চিন্তা করছে সওজ।
ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপকে সহযোগী হিসেবে নিয়ে সড়ক ও জনপথের এ উদ্যোগে এয়ারপোর্ট রোড যে কেবল ঢাকা শহরের সবচেয়ে সবুজ সড়ক হচ্ছে তাই নয়, একই সঙ্গে এটিই হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল সড়কও।
এ সড়কে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সংযোগ ঘটিয়ে দেবে পাবলিক ওয়াইফাই সংযোগ। আঁধার তাড়াবে ডিজিটাল এলইডি বাতি। স্নিগ্ধতা ছড়াবে ১২টি ফাউন্টেইন (ঝরনা)। নিরাপত্তার নজরদারি চালাবে সিসিটিভি ক্যামেরা। বিশ্রামের জন্য থাকবে ১০টি ডিজিটাল প্যাসেঞ্জার সেড বা অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনি।
সঙ্গে থাকবে বিনা পয়সার পাবলিক টয়লেট, বেন্ডিং মেশিন, এটিএম বুথ, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, নামাজের কক্ষ, বিশুদ্ধ খাবার পানি, চার্জিং স্টেশন, মানি চেঞ্জার, পুলিশ বক্স।
এরই মধ্যে শোভা ছড়াতে শুরু করেছে শতাধিক বনসাই। লাগানোর দুই সপ্তাহের মাথায় উঁকি দিতে শুরু করেছে সবুজ কুঁড়ি। রেডিসন হোটেলের বিপরীতে সবুজে শোভিত করা হয়েছে ফুটপাত। ঝরছে দৃষ্টিনন্দন ফাউন্টেইন। মাটি সাজিয়ে খোদাই করে লেখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। তার আধ কিলোমিটার দূরে নিকুঞ্জ এলাকার প্রবেশ মুখ ও কুড়িল ফ্লাইওভারের গোড়ায় নির্মিত হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার ভাস্কর্য ‘বীর’।
ভিনাইল ওয়ার্ল্ড এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও আবেদ মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, বনানী-এয়ারপোর্ট সড়কে পুরো বছর জুড়েই থাকবে নানা ধরনের মৌসুমী ফুলের বাহার। আর ফাইকাস প্রজাতির বনসাই দেশের সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনে অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়। কালশী থেকে মিরপুর ডিওএইচএস, বাংলামটর থেকে শাহবাগ, বিজয় সরণী, এয়ারপোর্ট চত্বর ও মিরপুর-১০সহ বিভিন্ন সড়কে সৌন্দর্যবর্ধনে এ গাছ ব্যবহৃত হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ ‘স্ট্রিট প্লানটেশন গাইডলাইন’ দেখে বলেন, বড় দেশি গাছের মাঝে কিছু বনসাই থাকবে। এটা ভালো পরিকল্পনা।
ভিনাইল ওয়ার্ল্ড জানায়, তারা এযারপোর্ট থেকে বনানী পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তার ফুটপাত প্রশস্তকরণ ও বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে ফুটপাত নির্মাণেরও কাজ করছে। ক্লান্ত পথিকের বিশ্রামের জন্য ফুটপাতের পাশে বসছে বেঞ্চ। আর এই বেঞ্চের পাশেই বসছে ডিজিটাল ডাস্টবিন। ডাস্টবিনের ওপরের স্ক্রিন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ওই নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা ও আদ্রতার জানান দেবে।
কুড়িল থেকে কাওলা অংশে চলছে ৪ ফুট থেকে ৭ ফুট উচ্চতার নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মাণ। যার পুরোটাই ওয়াল কার্পেট ও মানি প্লান্টসহ বিভিন্ন ধরনের গুল্মলতায় ছেয়ে যাবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, কাজ শেষ হলে এটিই হবে রাজধানীর সবচেয়ে বেশি সুবজে শোভিত সড়কপথ। দেশের সড়ক সৌন্দর্যায়নের মডেল হবে বনানী-এয়ারপোর্ট রোড।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মে মে ২১, ২০১৭
এসএ/জেডএম